জুলাই আন্দোলনে সামনে থাকা নারীরা পরবর্তী সময়ে কেন মুখ লুকিয়ে ফেললেন, তা বোঝার প্রয়োজন আছে বলে মন্তব্য করেছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। তিনি বলেছেন, জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেক নারী ঘর বন্ধ করে বসে আছেন। তাঁরা হতাশাগ্রস্ত। তাঁদের খুঁজে বের করতে হবে।
জুলাই আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা স্মরণ করে আজ ১৪ জুলাই ‘জুলাই উইমেন্স ডে’ উদ্যাপন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে দুপুরে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে আয়োজনের কারণ তুলে ধরে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মূল অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে আজ। তিনি জানান, গত বছর এই দিনে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মেয়েরা বেরিয়ে আসেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। মেয়েদের অবদান স্মরণ করতে দিনটি নানা আয়োজনে উদ্যাপন করছে সরকার।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরও জানান, এ উপলক্ষে আজ সন্ধ্যা ছয়টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে। এরপর ছয়টি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। অনুষ্ঠান রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে। তিনি বলেন, গত বছর যেভাবে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা হল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন, আজ রাতেও মেয়েরা সেভাবে বের হবেন, যা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
তিনি আরও জানান, আজ থেকে ৬৪ জেলায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু হচ্ছে। এ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনে পাঁচজন উপদেষ্টা সেখানে গেছেন। স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ আগামী ৪ আগস্ট শেষ হবে।
এ সময় শারমীন মুরশিদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যখন ছেলেরা আক্রান্ত হচ্ছিলেন, তখন মেয়েরা তাঁদের রক্ষা করেছেন। জুলাই আন্দোলন দেখিয়েছে, কীভাবে সম্মিলিত শক্তি বিকশিত হয়ে সমাজ পরিবর্তন ঘটাতে পারে। এ শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
তিনি জানান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রত্যেক নারী যোদ্ধাকে খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছে। নারীরা ‘সাইবার বুলিং’-এর শিকার হচ্ছেন। প্রথমে তাঁদের খুঁজে বের করে কাউন্সেলিং করা হবে এবং পরবর্তী সময়ে তাঁদের কীর্তি সংরক্ষণ করা হবে।
মুখ লুকানো নারী যোদ্ধাদের খুঁজে বের করতে এত সময় লাগল কেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শারমীন মুরশিদ বলেন, এ বিষয়গুলো আমাদের গোচরে আসতে সময় লেগেছে। আমরা তাঁদের কাছে যথাযথ সময়ে পৌঁছাতে পারিনি। তবে দেরি হলেও জুলাই আন্দোলনের সময় সম্পৃক্ত নারীদের খুঁজে বের করতে ১০০ জন নারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অনেক মেয়ে জানিয়েছে, তারা সামনে আসতে রাজি নয়। কেন এমন হলো, তা খুঁজে বের করতে হবে। তাঁদের কাউন্সেলিং করতে হবে। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। কিছুদিন আগেও যাঁরা রাজপথে লড়েছিলেন, এখন তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন—এটা ভালো বার্তা দেয় না।
শারমীন মুরশিদ বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরও নারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। এবার যাতে নারীরা মুখ ফিরিয়ে না নেন, সে চেষ্টা চলছে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছু ম্যাজিকের মতো হয় না। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি সাইবার টিম গঠন করছে, যা ২৪ ঘণ্টা সাইবার বুলিং নজরদারি করবে। দেশে ও বিদেশে বসে যারা এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ করছে, তাদের নজরে রাখা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। পরে সাংবাদিকদের গণভবনের চারপাশ ও জাদুঘর নির্মাণের বিষয়টি দেখানো হয়।