জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা ও পৃথক দিনে গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্যমান স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

বুধবার বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ সাংবাদিকদের এ দাবি জানান।

তিনি বলেন, বৈঠকে তারা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। বর্তমানে প্রবাসীদের অনেক ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়, যা কমানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

একই সঙ্গে সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনেরও দাবি জানায় জামায়াত। দলটির মতে, নির্বাচন ও গণভোট একদিনে হলে ভোটারদের মনোযোগ প্রার্থীদের দিকে চলে যাবে, ফলে গণভোট গৌণ হয়ে পড়বে।

হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “সংসদ নির্বাচন ও গণভোট এক সঙ্গে একই দিনে হলে নানা জটিলতা হবে। সবার আগ্রহ থাকবে প্রার্থীর দিকে। গণভোট গৌণ হয়ে যাবে। তাই নির্বাচনের আগে যে কোনো দিন গণভোট হওয়া উচিত।”

তিনি জানান, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন বলেছে সরকার যে নির্দেশনা দেবে সে অনুযায়ী তারা কাজ করবে। এজন্য বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি জমা দেবে জামায়াত, যাতে গণভোট সংসদ নির্বাচনের আগে এবং পৃথক দিনে আয়োজনের দাবি স্পষ্টভাবে জানানো হবে।

আরপিও সংশোধনকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করে জামায়াতের এ নেতা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী থাকলেও, তারা যেন বিদ্যমান স্ট্রাইকিং ফোর্সের মতোই দায়িত্ব পালন করে—এমন প্রত্যাশা দলের।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা হয়, এমন কিছু হলে যেন কঠোরভাবে দমন করা হয়—এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। সেনাবাহিনী এখন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছে, ভোটে তারাও আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করুক।”

পোস্টাল ভোটিংয়ে নিবন্ধন সহজ করার দাবি
বৈঠকে জামায়াত প্রবাসী ও দেশের অভ্যন্তরে পোস্টাল ভোটিংয়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। তবে নিবন্ধনের সময় পানির বিল, বিদ্যুৎ বিলসহ অতিরিক্ত শর্ত বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানায় দলটি।

আযাদ বলেন, “পোস্টাল ভোটিং অ্যাপে নিবন্ধনের শর্তে নানা জটিলতা রয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডি থাকলেই যথেষ্ট হবে। এতে প্রবাসীদের নিবন্ধন সহজ হবে।”

তিনি আরও জানান, প্রবাসীদের মধ্যে ভোটার নিবন্ধন ও পোস্টাল ভোটিং নিবন্ধন নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দুটি আলাদা প্রক্রিয়া—ভোটার নিবন্ধন চলমান, আর পোস্টাল ভোটিংয়ের নিবন্ধন ১৮ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে।

আযাদ বলেন, “ইসি এ বিষয়ে প্রচারণা চালাবে, আমরা সহযোগিতা করব। ১৮ নভেম্বর থেকে অঞ্চলভিত্তিক সময়সূচি দিলে প্রবাসীরা নির্ধারিত সময়ে অ্যাপে গিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন।”

জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৬ নভেম্বর পোস্টাল ভোটিং অ্যাপ উদ্বোধনের পর কমিশন তা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে। কিছু ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে এদিন তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

বৈঠকে জামায়াতের দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, আমরা চাই সে সময়েই নির্বাচন হোক। কমিশনের নেওয়া কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি চলছে।”