নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং সেনাবাহিনী তখন ব্যারাকে ফিরে যেতে পারবে—এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সেনা সদর।
বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন সেনা সদর দপ্তরের আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (আর্টডক)-এর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান।
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। ধীরে ধীরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং তখন সেনাবাহিনী সেনানিবাসে ফিরে যেতে পারবে। আমরা সেই সময়টার অপেক্ষায় আছি।”
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, “কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সেনাবাহিনী ও এর নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণা চালাচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য সেনাপ্রধান ও সিনিয়র নেতৃত্বের প্রতি শতভাগ অনুগত ও বিশ্বস্ত। বর্তমানে সেনাবাহিনী আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং ভ্রাতৃত্ববোধে দৃঢ়।”
গত ১৫ মাস ধরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকা সেনাবাহিনীর নিয়মিত কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জিওসি মাইনুর বলেন, “নির্বাচন পর্যন্ত বা তার কিছুটা পর পর্যন্ত আমাদের হয়তো বাইরে থাকতে হতে পারে। এতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকাই আমাদের শান্তিকালীন মূল দায়িত্ব। আমরা বলি—‘We train as we fight’। গত ১৫ মাসে সেনাবাহিনী যে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে, তা সহজ ছিল না। আমরা চাই, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এবং আমরা আমাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণে ফিরতে পারি।”
সেনাবাহিনী মাঠে থাকলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রত্যাশিত উন্নতি না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পরের সময়টার দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৫ বছর ধরে দমিয়ে রাখা আবেগের এক ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছিল। অনেক প্রতিষ্ঠান তখন অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এমন ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ফলাফল আশা করা যায় না। এই সময়ে সেনাবাহিনী কুমিল্লা ও নোয়াখালীর বন্যা, বিভিন্ন বাহিনীর অস্থিরতা, পুলিশ স্টেশন রক্ষা, এমনকি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ—সব দায়িত্বই পালন করেছে। অথচ এগুলো আমাদের মূল দায়িত্ব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা না থাকলে পরিস্থিতির অবনতি কতটা হতো, সেটা অনুমান করাই কঠিন। বিষয়টি সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বাস্তব চিত্র স্পষ্ট হবে।”
একই সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের (এমওডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মনজুর হোসেন জানান, গত ১৫ মাস ধরে সেনাবাহিনী বেসামরিক প্রশাসনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করছে। এ সময় চুরি যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে বড় অগ্রগতি হয়েছে।
তার তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৮১ শতাংশ খোয়া যাওয়া অস্ত্র ও ৭৩ শতাংশ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। কিশোর গ্যাং, ডাকাত, চাঁদাবাজসহ ১৯ হাজারেরও বেশি সন্দেহভাজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অর্ধেক সদস্য ব্যারাকে ফিরবে
বর্তমানে মাঠে থাকা সেনাসদস্যদের অর্ধেককে প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকার থেকে নির্দেশনা পেয়েছে সেনা সদর।
এই বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার মনজুর বলেন, “আমরা প্রত্যাহারের চিঠি পেয়েছি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বুধবার থেকে সেনাবাহিনীর ৫০ শতাংশ সদস্যকে বিশ্রাম ও নির্বাচনী প্রশিক্ষণের জন্য ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। পরে ধাপে ধাপে তাদের পুনরায় মোতায়েন করা হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে অন্যরাও বিশ্রাম ও প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন।
গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দেশে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ৬০ দিনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রদান করে সরকার।
এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে নৌ ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারাও একই ক্ষমতা পান।
পরবর্তীতে এই মেয়াদ সাত দফায় দুই মাস করে বাড়ানো হয়।
