আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে গঠিত অনুসন্ধান কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ২০২৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর গঠিত এই কমিশনের মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
কমিশনের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। সদস্যরা হলেন—অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস এবং মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন।
পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সিআইডি, এসবি, ডিবি, আনসার, এনএসআই, ডিজিএফআই, কোস্ট গার্ডসহ দেশের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত গুমের ঘটনা অনুসন্ধানে এই কমিশন কাজ করছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন ও গোপন বন্দিশালার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় ছিল। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ‘আয়নাঘর’ নামের গোপন বন্দিশিবিরে নির্যাতনের অভিযোগও উঠে আসে।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর, ২৭ আগস্ট গুম তদন্ত কমিশনের গঠন প্রজ্ঞাপন জারি করে নতুন সরকার।
কমিশন এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ পেয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি যাচাই-বাছাই করে দুটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রথম প্রতিবেদনটি গত ১৪ ডিসেম্বর জমা দেওয়া হয়, যেখানে ‘গুমের নির্দেশদাতা’ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার দাবি করা হয়।
দ্বিতীয় প্রতিবেদনটি ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া হয়। সেখানে গুমের শিকার ব্যক্তিদের বক্তব্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্ণনা ও নির্যাতনের সচিত্র বিবরণ রয়েছে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত তিনটি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করেন। তাঁর সঙ্গে কমিশন সদস্য ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, অতীত সংশোধনে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন পরিবর্তন করে এক বছরের মধ্যে বিচার শেষ করার বাধ্যবাধকতা এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সাজানো মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতের জন্য কমিশন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিরাপত্তাবাদী মডেল’ বাদ দিয়ে ‘সামগ্রিক ও পুনর্বাসনমুখী’ সন্ত্রাসবিরোধী কৌশল গ্রহণ করা উচিত, যাতে চরমপন্থার আদর্শগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলো টেকসইভাবে মোকাবিলা করা যায়।