আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকায় নৌকা প্রতীক নির্বাচন কমিশনের তফসিল থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের গড়া নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। একই সঙ্গে শাপলা প্রতীক তফসিলভুক্ত করে তাদের বরাদ্দ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে নিবন্ধনপ্রত্যাশী দলটি।
রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ দাবি তোলে এনসিপির প্রতিনিধি দল।
দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসা। নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১১টা থেকে দুই ঘণ্টার বেশি সময় বৈঠক চলে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করে ১১৫টি প্রতীক সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। খসড়া বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনর্বহালের পর দাঁড়িপাল্লা প্রতীক তফসিলে যুক্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত হলেও নৌকা প্রতীক বহাল রয়েছে। কিন্তু এনসিপি ও নাগরিক ঐক্যের দাবি করা শাপলা প্রতীক তফসিলে নেই।
সিইসির সঙ্গে বৈঠকের পর এক ব্রিফিংয়ে অ্যাডভোকেট মুসা বলেন, “আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকা অবস্থায় নৌকাকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। আমরা বিষয়টি ইসির নজরে এনেছি। আইনগতভাবে নৌকা প্রতীক তালিকায় রাখা সম্ভব নয়।”
অভ্যুত্থানের দাবিতে সরকার আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে ইসি। এনসিপির দাবি, আদালতের নির্দেশনা বা সরকারের নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত নৌকা প্রতীক তালিকায় রাখা যাবে না।
প্রবাসী ভোটারদের ভোটগ্রহণ পদ্ধতি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা করে এনসিপি প্রতিনিধি দল।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “নির্বাচনের আগে ইসি পুনর্গঠন করতে হবে। আগের আইন বদলাতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী যাঁরা ভালো কাজ করেছেন তাঁদের রাখা যেতে পারে। তবে অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে একটি দলের মুখপাত্রের মতো আচরণ করছেন।”
‘শাপলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “শাপলা প্রতীক পেতে আইনগত কোনো বাধা নেই। যদি বাধা দেওয়া হয়, রাজনৈতিকভাবে আমরা লড়ব।”
নিবন্ধনপ্রত্যাশী এনসিপি ২২ জুন শাপলা প্রতীকের জন্য আবেদন করে। তারা কলম ও মোবাইল প্রতীকও প্রস্তাব করে। এর আগে নাগরিক ঐক্য ১৭ জুন তাদের কেটলি মার্কার পরিবর্তে শাপলার জন্য আবেদন করেছিল।
তবে শাপলা জাতীয় প্রতীক বিবেচনায় ইসি তা তফসিলে রাখেনি। মুসা বলেন, “জাতীয় প্রতীক হচ্ছে ভাসমান শাপলা, ধানের শীষ, তারকা ও পাটপাতা। এর মধ্যে ধানের শীষ বিএনপির, তারকা ও সোনালী আঁশ অন্য দলের। জাতীয় ফল কাঁঠালও একটি দলের প্রতীক। জাতীয় প্রতীক আসলে শাপলা নয়, বরং চারটি উপাদানের সমন্বিত চিহ্ন। রং ও ব্যাসার্ধ বিধিতে নির্ধারিত।”
আইন মন্ত্রণালয়ে খসড়া পাঠানোর পরও তফসিলে সংশোধনের দাবি জানিয়ে মুসা বলেন, “নৌকাকে তালিকায় রাখা যাবে না। শাপলাকে তফসিলে রাখতে কোনো আইনগত বাধা নেই। আমরা নতুন দরখাস্ত দিয়ে কমিশনকে বিষয়টি জানিয়েছি।”
তিনি বলেন, “এনসিপি নিবন্ধন পেলে শাপলা যেন বরাদ্দ দেওয়া হয়, সে আবেদনও করেছি। সাধারণত ইসি দরখাস্ত গ্রহণ করে বিবেচনা করে থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “ইসি যখন নীতিগতভাবে খসড়া পাঠিয়েছে, আমরা প্রথম দল হিসেবে শাপলা চেয়ে আবেদন করেছি। আমাদের অধিকার আগে। শাপলা আমরা পাব বলে আশা করি।”
ইসি পুনর্গঠন প্রসঙ্গে মুসা বলেন, “যে প্রক্রিয়ায় বর্তমান কমিশন গঠন হয়েছিল, তা আমরা সমর্থন করিনি। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় ইসিসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বচ্ছ রাখার প্রস্তাব আছে।”