রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় অস্ত্র আইনের মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার তিন সহযোগীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
বাকি তিন আসামি হলেন—সুব্রত বাইনের সহযোগী আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ, এম এ এস শরীফ ও আরাফাত ইবনে নাসির। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম রোববার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম ওয়াহিদুজ্জামানের আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বিচারক অভিযোগপত্র দেখে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দিয়েছেন।
গত ২৭ মে ভোরে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে কুষ্টিয়া জেলা থেকে সুব্রত বাইন ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সুব্রত বাইনের দুই সহযোগী আরাফাত ও শরীফকে।
অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩টি গুলি এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২৮ মে অস্ত্র আইনে মামলা করেন হাতিরঝিল থানার এসআই আসাদুজ্জামান।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসামি সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ঘোষণা করে এবং তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। তারা ‘সেভেন স্টার গ্রুপ’ নামে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করত।
সুব্রত বাইন তৎকালীন সময়ে খুন, ডাকাতি ও অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি ভারত পালিয়ে যান। ৫ আগস্টের পর তিনি দেশে ফিরে পুনরায় খুন ও চাঁদাবাজি শুরু করেন। সহযোগী শরীফের হাতিরঝিলের একটি বাড়িতে তারা নিয়মিত মিটিং করতেন এবং সেখানে অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখতেন। পরে হাতিরঝিল নতুন রাস্তা এলাকা থেকে শরীফ ও আরাফাতকে আটক করা হয়।
তবে এ মামলার বিবরণে ৫ আগস্টের পর সুব্রতের দেশে ফেরার কথা বলা হলেও গুম–সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে ভিন্ন তথ্য উঠে আসে।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ সালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে গেলে সুব্রত ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি ২০০৮ সালের ১৩ অক্টোবর কলকাতায় গ্রেপ্তার হন। পরবর্তী সময়ে জামিনে মুক্ত হয়ে গা ঢাকা দেন এবং ২০০৯ সালে নেপালে পালিয়ে যান। সেখানে গ্রেপ্তারের পর ২০১২ সালে নেপালের কারাগার থেকে পালিয়ে ফের ভারতে প্রবেশ করেন।
পরে আবারও তিনি ভারতে গ্রেপ্তার হন এবং ২০২২ সালে ভারত ও বাংলাদেশের ‘গোপন ও অবৈধ’ বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে তাকে র্যাবের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে আনার পর তিনি র্যাব হেফাজতে টিএফআই সেলে বন্দি ছিলেন। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৬ থেকে ৭ আগস্টের মধ্যে তিনি মুক্তি পান বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।