সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদের মরদেহ উদ্ধার

চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউজের একটি কক্ষ থেকে সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশীদ বীর প্রতীকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

ডেসটিনি মাল্টি পারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটির সভাপতি প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রোববার বিকেলে একটি মামলায় হাজিরা দিতে চট্টগ্রামে আসেন হারুন-অর-রশীদ। তিনি চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউজের ৩০৮ নম্বর কক্ষে ছিলেন।

শহীদুল ইসলাম বলেন, “আজকে আমাদের মামলার হাজিরা ছিল। সবাই কোর্টে গেলেও তিনি যাননি এবং ফোনেও পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে গেস্ট হাউজে জানালে তারা গিয়ে ঘরে অচেতন অবস্থায় তাকে পায়। সিএমএএইচের চিকিৎসকরা এসে জানান, তিনি আর বেঁচে নেই।”

চট্টগ্রাম ক্লাব লিমিটেডের সেক্রেটারি অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডার মো. আশরাফ উদ্দিন জানান, সকালে সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি তাকে নিতে আসে। ফোনে না পেয়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে তাকে বিছানায় শোয়া অবস্থায় পাওয়া যায়।

তবে তার মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি।

চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল করিম বলেন, “তিনি রাতে গেস্ট হাউজে ছিলেন। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেছি। বিস্তারিত পরে জানা যাবে।”

ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনও ক্লাবে ছুটে আসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এর আগেও এই মামলায় হাজিরা দিতে চট্টগ্রামে এসেছি। কাল সকালে উনার ফ্লাইট ছিল। আজ চলে যাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটে গেল।”

হারুন-অর-রশিদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নে। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং বীর প্রতীক খেতাব অর্জন করেন।

২০০০ সালের ডিসেম্বরে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন এবং ২০০২ সালের জুনে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পর তাকে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজিতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পরে তিনি সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব ও ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ডেসটিনির আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় ২০১২ সালে তাকে কারাগারে যেতে হয় এবং পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পান।

২০২২ সালের ১২ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের এক মামলায় আদালত তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দেয়। সাবেক সেনাশাসক এইচ এম এরশাদের পর তিনি ছিলেন প্রথম সাবেক সেনাপ্রধান, যিনি কোনো মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যান।