পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি আইন প্রয়োগে বাংলাদেশের তীব্র নিন্দা

দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি আইন বলবৎের উদ্যোগের কঠোর নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে দখলকৃত এলাকায় তথাকথিত ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ আরোপ করে সম্প্রতি ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটের অনুমোদিত খসড়া আইনের কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে বাংলাদেশ।”

বুধবার ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেট পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি আইন প্রযোজ্য করার একটি বিলে প্রাথমিক সম্মতি দেয়। ১৯৬৭ সালে দখল করা এই ভূখণ্ডকে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ স্বাধীন রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখে। আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (ICJ) গত বছর রায় দিয়েছিল—পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখল আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অতীতে পশ্চিম তীরকে দেশটির সঙ্গে যুক্ত করার পক্ষে মত দিলেও, তা বাস্তবায়ন করেননি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এবং আরব দেশগুলোর সঙ্গে নবগঠিত সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় তিনি পরিকল্পনাটি এগিয়ে নেননি। তবে নেতানিয়াহুর জোটে থাকা উগ্র জাতীয়তাবাদীরা বারবার পশ্চিম তীর দখলের আহ্বান জানিয়ে আসছে। এবারের বিলটি সরকারি দলের বাইরের সংসদ সদস্যরা উত্থাপন করেছেন।

বিলটি ১২০ আসনের নেসেটে ২৫-২৪ ভোটে অনুমোদিত হয়। এটি আইন হতে আরও চার ধাপের ভোট প্রক্রিয়া অতিক্রম করতে হবে। প্রথম ধাপের ভোটটি বুধবার সম্পন্ন হয়েছে। বিলটি শেষ পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পাবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রধানমন্ত্রী চাইলে বিলটি বিলম্বিত করতে বা স্থগিত রাখতেও পারেন।

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিলটির নিন্দা জানিয়ে জানিয়েছে, “ফিলিস্তিনি ভূমির ওপর ইসরায়েলের কোনও সার্বভৌমত্ব থাকতে পারে না।” বর্তমানে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েল প্রায় ১৬০টি অবৈধ বসতি গড়ে তুলেছে, যেখানে ৭ লাখ ইসরায়েলির পাশাপাশি বসবাস করছে প্রায় ৩৩ লাখ ফিলিস্তিনি। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এসব বসতি অবৈধ।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বিলটির সমালোচনায় বলেছেন, পশ্চিম তীর সংযুক্তির প্রচেষ্টা শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে এবং উল্টো ফল বয়ে আনবে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব—বিশেষত ২৩৩৪ নম্বর প্রস্তাব—লঙ্ঘন করে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে দখল অব্যাহত রেখেছে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করছে যে, পূর্ব জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের কোনও অংশেই ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব নেই।”

এছাড়া, ২২ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (ICJ) দেওয়া উপদেশমূলক মতামতকে বাংলাদেশ স্বাগত জানিয়েছে—যেখানে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের বাধ্যবাধকতা এবং ‘ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের’ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি গুরুত্ব পায়।

শেষে বাংলাদেশ সরকার ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারসহ পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭-পূর্ব সীমারেখার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।