জুলাই সনদে সই করতে প্রস্তুত বিএনপি, বললেন সালাহউদ্দিন

বিভিন্ন খাতের সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও মতবিরোধের মধ্যেই যে কোনো সময় ‘জুলাই জাতীয় সনদে’ সই করতে বিএনপি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপনের আগের দিন সোমবার গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সালাহউদ্দিন বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের খসড়া সনদ তারা হাতে পেয়েছেন এবং তাতে তারা যে অঙ্গীকারনামা দিয়েছেন, সেখানে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, “কালকেই সই করব, যে কোনো মুহূর্তে আমরা সই করতে রাজি। এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। যেসব বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য হয়েছে, আমরা সই করব।”

ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিশনের সংলাপের শেষ দিকে এসে দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয় সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে। কোন ভিত্তিতে এবং কীভাবে এটি বাস্তবায়ন হবে—এ বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়।

এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, “বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কারও কোনো প্রস্তাব থাকলে সে বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিতে পারি। তবে কোনো বৈধ প্রক্রিয়া ছাড়া সংবিধান সংশোধনের কোনো উপায় থাকলে, সেটা তারা বলুক।”

তিনি আরও বলেন, “জুলাই সনদে অঙ্গীকার শুধু সইয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি বাস্তবায়নের অন্য ধাপে যাবে—এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, সংশয় প্রকাশ করেছেন। এক্ষেত্রে একটা বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে যে বিএনপি সহযোগিতা করছে না। অথচ আমরা যেসব সহযোগিতা করেছি, তা জাতির সামনে দৃশ্যমান। প্রতিটি প্রেস ব্রিফিংয়ে কমিশনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে।”

সালাহউদ্দিন ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “৩১ দফা বাস্তবায়ন করা আমাদের পূর্বপ্রত্যয়িত প্রতিশ্রুতি। সে জায়গা থেকে আমাদের উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ যেন প্রশ্ন না তোলে। বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে, রাজনৈতিক হীনমন্যতার প্রকাশ হিসেবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, সমস্ত কিছু আইনানুগভাবে, সংবিধান অনুযায়ী এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই হোক।”

বিএনপি সব ধরনের আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি। বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে বিএনপি সব ধরনের বৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে একমত।”

সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়নই চায় বিএনপি

সালাহউদ্দিন বলেন, “জুলাই সনদে যেসব বিষয় আছে, সেগুলোর বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধন, আইন ও বিধি পরিমার্জন ও প্রণয়ন, এমনকি নতুন আইন তৈরির প্রতিশ্রুতি কমিশন দিয়েছে। আমরা একমত হয়েছি—পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে এসব সম্পন্ন করতে হবে।”

তিনি জানান, “আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষায় প্রতিটি ধাপে বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দিতেও আমরা একমত হয়েছি। দীর্ঘ ১৬ বছরের লড়াই, গুম-খুন-বিচারবহির্ভূত হত্যা, নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং ২০২৪ সালের ছাত্র গণআন্দোলনের সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিষয়েও আমরা সম্পূর্ণ একমত। এ বিষয়ে ৩০ জুলাই রাতেই আমাদের মতামত জমা দিয়েছি।”

“সংস্কার বাস্তবায়ন যদি নির্বাচিতরা না করে, করবে কে?”

সালাহউদ্দিন বলেন, “সংস্কার বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্য কোনো রাজনৈতিক দল যদি ভিন্ন মত দেয়, তারা কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। আমাদেরও সেই আলোচনায় ডাকলে আমরা অংশ নেব।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “তবে অবাস্তব বা অলীক প্রক্রিয়ার কথা বলা হলে, আমরা তার উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখব। কারণ, যদি নির্বাচিত সরকারকেই দায়িত্ব না দেওয়া হয়, তবে কাকে দেওয়া হবে? অনির্বাচিত সরকারের কাছে? যারা বর্তমানে আছে, তারা তো অনেক সংস্কার বাস্তবায়ন করছে। কেবল সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি জাতীয় সংসদ ছাড়া সম্ভব নয়।”

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “কোনো বৈধ কাগজ বা আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই যদি সংবিধান সংশোধন সম্ভব হয়, তাহলে সেটি কেমন প্রক্রিয়া? সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জাতি একমত হবে কিনা, সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে।”

দীর্ঘ আলোচনার পর রাষ্ট্র সংস্কারের ১৯টি মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যের খবর এলেও শেষ পর্যন্ত কতটি দল জুলাই সনদে সই করবে—তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।

জামায়াতে ইসলামি ও এনসিপি জানিয়েছে, সনদে আইনি ভিত্তি না থাকলে তারা সই করবে কিনা—সেটি ভেবে দেখবে। আর সিপিবি ও বাসদসহ চারটি বামপন্থি দল ‘জাতীয় চার নীতি’ বাদ দেওয়াকে কেন্দ্র করে শেষ বৈঠক বর্জন করেছে এবং জানিয়েছে, প্রস্তাবে পরিবর্তন না এলে তারা সনদে সই করবে না।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জাতীয় সনদের এখনই আইনি ভিত্তি প্রয়োজন নেই।