মুরাদনগরে মাফিয়াতন্ত্র কায়েমের অভিযোগ ছাত্রদল নেতার

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেছেন, মুরাদনগরে একধরনের মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন যারা জুলাই ও আগস্টে খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, তার আগে একাধিকবার জেলে গিয়েছে, গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে দুঃখজনকভাবে তারা এখনও জেলে।’

আজ সোমবার দুপুরে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে মুরাদনগর থানায় হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় কারাগারে থাকা উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজিম উদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। পরে কারাগারের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নাছির উদ্দীন। এ সময় কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী (আবু), সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা (টিপু) উপস্থিত ছিলেন।

নাছির উদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যসব জায়গায় ইতিবাচক রাজনীতি থাকলেও মুরাদনগরে তা নেই। এখানে একজন উপদেষ্টা মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছেন।’

গত ২৭ জুলাই উচ্চ আদালত থেকে জামিনের মেয়াদ শেষে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৩ নেতা–কর্মী কুমিল্লার আদালতে জামিন চাইলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন এবং তাঁদের কারাগারে পাঠান। ওই ১৩ জনের মধ্যে ছিলেন নাজিম উদ্দীন। তাঁকে কারাগারে পাঠানোর খবর শুনে তাঁর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৩১ জুলাই সকালে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। রাতে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে হাতকড়া পরা অবস্থায় মায়ের জানাজায় অংশ নেন নাজিম।

ছাত্রদল নেতারা অভিযোগ করেন, মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের দোসরদের কেউ কারাগারে নেই, অথচ আন্দোলনকারী বিএনপি–ছাত্রদল নেতা–কর্মীদের গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আসিফ মাহমুদ এখন উপদেষ্টা, তিনি কীভাবে নির্বাচন করবেন? অনেকে বলছেন, তফসিল ঘোষণার পর পদত্যাগ করবেন। এই সরকারকে কীভাবে নিরপেক্ষ বলব? থানার ওসির বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে, যা শতভাগ সত্য। ওসি তাঁর (আসিফ মাহমুদের) প্রভাবেই মামলা করেছেন।’

তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘মুরাদনগরের ওসি নিরপেক্ষ নন। তিনি আসিফ মাহমুদ, তাঁর বাবা ও আওয়ামী লীগের দোসরদের শেল্টার দিচ্ছেন। অথচ গণতান্ত্রিক রাজনীতির কর্মীদের হয়রানি করছেন, গ্রেপ্তার করছেন। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অনুরোধ, এই বিষয়গুলো নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করে সংবাদ পরিবেশন করুন।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২৪ মার্চ ইফতারের আগে কোম্পানীগঞ্জ বাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী পরিবহনে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় শ্রমিক দল নেতা আবুল কালামের সঙ্গে তাঁর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। উবায়দুল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের চাচাতো ভাই।

ওই ঘটনার পর আবুল কালামকে আটক করে পুলিশ। এরপর তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে যুবদলের এক নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি আবুল কালামের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে বিএনপি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় থানার এসআই আলী আক্কাস বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় যুবদল নেতা মাসুদ রানাকে প্রধান আসামি এবং বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিনসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৭০–৮০ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী নেতা আবু ফয়সাল চাঁদাবাজি ও হামলার অভিযোগে আবুল কালামকে প্রধান আসামি করে আরেকটি মামলা করেন।

পুলিশের মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসা ১৩ নেতাকর্মীর সবাই সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের অনুসারী।