গাস অ্যাটকিনসনের স্টাম্প উড়িয়ে দিয়ে ভারতকে নাটকীয় জয় এনে দিলেন ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। আগের দিন হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ হাতে জমিয়েও ছক্কা বানিয়ে দিয়ে বিপর্যয় ডেকে আনা সিরাজই শেষ পর্যন্ত ভারতের নায়ক হয়ে উঠলেন। খলনায়ক থেকে নায়ক—৫ উইকেট নিয়ে সিরাজ জয় এনে দিলেন ভারতকে ৬ রানে, সিরিজ করলেন ১–১ এ ড্র।
৩৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করা ইংল্যান্ড শেষ দিনে দরকার ছিল ৩৫ রান, ভারতের চাই ৪ উইকেট। দর্শকে ঠাসা ওভালে দিনের দশম ওভারে অ্যাটকিনসনকে বোল্ড করে ইংল্যান্ডকে ৩৬৭ রানে অলআউট করলেন সিরাজ। রানের ব্যবধানে টেস্টে এটি ভারতের সবচেয়ে ছোট জয়।
অ্যাটকিনসন যদিও জয়ের খুব কাছেই পৌঁছে গিয়েছিলেন। ইংল্যান্ড ৩৫৭ রানে নবম উইকেট হারানোর পর উইকেটে এলেন ক্রিস ওকস, যাঁর বাঁ হাতটি তখনো ব্যান্ডেজে মোড়ানো ও সোয়েটারের ভেতরে ঢোকানো ছিল।
এরপর অ্যাটকিনসন দারুণ ক্যালকুলেটিভ ব্যাটিং করলেন। ওকসকে নন–স্ট্রাইকেই রাখলেন টানা ১৩ বল। দুই ওভারে শেষ দুই বলে ১ রান করে স্ট্রাইক নিজের কাছে রাখলেন। কিন্তু তাঁকে নায়ক হতে দিলেন না সিরাজ। কাঁধের ওপর ক্যাচ ছেড়ে দেওয়া ‘পাপ’ মোচন করলেন অ্যাটকিনসনকে বোল্ড করে।
ওকসও নায়ক হতে পারলেন না। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হয়ে নামার ঘোষণা আগেই ছিল। ওভার শেষেই ব্যাট হাতে নামলেন, সোয়েটারের ভেতরে ছিল তার ব্যান্ডেজ মোড়া বাঁ হাত। আগের ওভারের শেষ বলে উইকেট পড়ায় স্ট্রাইকও পেলেন। এরপর সিরাজের ওভার খেললেন অ্যাটকিনসন।
ওভারের দ্বিতীয় বলে কাউ কর্নারে ছক্কা হাঁকালেন অ্যাটকিনসন। যদিও এতে বড় ভূমিকা ছিল আকাশ দীপের—দৌড়ে গিয়ে বল ধরতে গিয়ে হাত ছুঁয়ে ছক্কা বানিয়ে দিলেন! তখন ১ উইকেট হাতে, প্রয়োজন ১১ রান। ওভারের শেষ বলেও দৌড়ে স্ট্রাইক ধরে রাখলেন অ্যাটকিনসন। পরের ওভারের শেষ বলেও একই কৌশলে স্ট্রাইক নিজের কাছে রাখেন। ব্যবধান তখন ৭।
দিনের শুরুটাও ছিল ইংল্যান্ডের পক্ষে। প্রসিধ কৃষ্ণাকে টানা দুটি চার মেরে দিন শুরু করেন জেমি ওভারটন। প্রথমটি মিডউইকেট দিয়ে সীমানার বাইরে, দ্বিতীয়টি ইনসাইড এজ হয়ে লং লেগ দিয়ে চার। ৩৫ রানে প্রয়োজন নেমে এল ২৭–এ।
আগের দিন হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ ছেড়ে দেওয়া সিরাজ প্রতিশোধ নিলেন জেমি স্মিথকে ফিরিয়ে। ব্যাটের নিচের অংশে লাগা বলটা গ্লাভসবন্দি করেন ধ্রুব জুরেল।
পরের বলেই উইকেটের সম্ভাবনা তৈরি হয়, অ্যাটকিনসনের ব্যাট ছুঁয়ে স্লিপে চলে যাওয়া বলটি ধরতে পারেননি লোকেশ রাহুল।
মেঘলা আকাশে দুর্দান্ত বোলিংয়ে সিরাজ এরপর এলবিডব্লু করেন ওভারটনকে। আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনার সিদ্ধান্ত রিভিউ নিয়েও টিকে যায় আম্পায়ার্স কলে। তখন ইংল্যান্ডের স্কোর ৩৫৪/৮, প্রয়োজন ২০ রান।
এরপরই এল বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। জশ টাংকে এলবিডব্লু দেন এহসান রাজা। টাং রিভিউ নেন, দেখা যায় বল লেগ স্টাম্প মিস করছিল। বেঁচে যান তিনি।
টাং এরপর ১২ বল খেলে কোনো রান না করলেও অ্যাটকিনসনকে সঙ্গ দেন। কিন্তু ২৯ বলে ১৭ রান করা অ্যাটকিনসনকে শেষ পর্যন্ত থামালেন সিরাজ।
দলকে জয় এনে দিয়েই নিজেকে পুনরুদ্ধার করলেন সিরাজ।
ভারত: ২২৪ ও ৩৯৬
ইংল্যান্ড: ২৪৭ ও ৮৫.১ ওভারে ৩৬৭ (ব্রুক ১১১, রুট ১০৫, ডাকেট ৫৪, পোপ ২৭, অ্যাটকিনসন ১৭; সিরাজ ৫/১০৪, কৃষ্ণা ৪/১২৬, দীপ ১/৮৫)
ফল: ভারত ৬ রানে জয়ী
সিরিজ: ৫–ম্যাচ সিরিজ ১–১ ড্র
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মোহাম্মদ সিরাজ
ম্যান অব দ্য সিরিজ: হ্যারি ব্রুক ও শুবমান গিল