তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরলে সংসদের ক্ষমতা সীমিত হবে কি না—প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল হলে তা সংসদের ক্ষমতাকে সীমিত করবে কিনা—এমন প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

বুধবার (২২ অক্টোবর ২০২৫) আপিল বিভাগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের বিষয়ে দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে এই প্রশ্ন উত্থাপন করেন তিনি।

বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া শুনানিতে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে আগামী ১৪তম জাতীয় নির্বাচন থেকে তা কার্যকর করা যেতে পারে। তিনি আদালতকে জানান, হাইকোর্ট থেকে আপিল বিভাগ পর্যন্ত এই মামলাটি মোট ১২ জন বিচারপতি শুনেছেন, যাদের মধ্যে আটজন ব্যবস্থাটি রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। অন্যদিকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকসহ চারজন তা বাতিলের পক্ষে ছিলেন।

আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া শুনানিতে আরও প্রস্তাব দেন, আপিল বিভাগ চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিষয়ে একটি গাইডলাইন নির্ধারণ করতে পারে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক মামলার আপিল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোনো মামলার শুনানি হবে না—এখন এটিই আপিল বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মামলা।

এর আগে ২১ অক্টোবর একই বিষয়ে প্রথম দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়।

এর ধারাবাহিকতায় ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আপিল করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত হয় ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ রায় দিয়ে রিট খারিজ করে এবং ব্যবস্থাটিকে বৈধ ঘোষণা করে।

পরে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয় এবং ২০০৫ সালে রিট আবেদনকারীরা আপিল করেন। ওই আপিলের শুনানি শেষে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে।

এরপর জাতীয় সংসদ ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে, যাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপসহ আরও কিছু পরিবর্তন আনা হয়। পরবর্তীতে ৩ জুলাই সংশোধনীর গেজেট প্রকাশ করা হয়।

গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। তাদের মধ্যে আছেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া এবং জাহরা রহমান।

এছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৬ অক্টোবর আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। একই বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গত বছরের ২৩ অক্টোবর আবেদন করেন।

পরবর্তীতে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও একই বিষয়ে গত বছর আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জমা দেন।