রিজভীর অভিযোগ: জামায়াত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চাইছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে টেলিফোন সংলাপের প্রসঙ্গ

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জামায়াতে ইসলামীর অতীত তুলে ধরে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তার সন্দেহ, জামায়াত এখন ‘পতিত ফ্যাসিস্টদের সাথে’ কাজ করছে।

বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এখন আবার তারা স্বরূপে বেরিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চাচ্ছেন, ভারতের সাথে ভালো সম্পর্ক চাচ্ছেন। কিন্তু এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে, ওই দেশটি শেখ হাসিনার মত রক্ত পিপাসু দানবকে প্রশ্রয় দিয়েছে নিজ দেশের মানুষকে হত্যা করার জন্য।”

দীর্ঘদিন বিএনপি-জামায়াত একসাথে জোটবদ্ধ হয়ে রাজনীতি করলেও জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে দুই দলের বক্তব্যে ফারাক তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রিজভী বলেন, “আমাদের দেশে ইসলামপন্থি একটি রাজনৈতিক দল বরাবরই আমার মনে হয়েছে আওয়ামী লীগকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করছে। তারা এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে শহীদ জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে। তারা নিষিদ্ধ দল ছিল। শহীদ জিয়া তাদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এমন কোনো তাদের মিটিং নাই, এমন কোনো তাদের কর্মসূচি নাই যে, তারা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন নাই। এরপরে আমরা দেখেছি, প্রতিটি ঘটনায় তারা আওয়ামী লীগের সাথে, আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের সাথে এক হয়ে কাজ করেছেন।”

নিজের বক্তব্যে তিনি উদাহরণ দেন ১৯৮৬ সালের নির্বাচনের, যেখানে বিএনপি বর্জন করলেও আওয়ামী লীগ ও জামায়াত অংশ নিয়েছিল। বলেন, “৮৬ সালে নির্বাচনে যাওয়া, সেটায় আওয়ামী লীগ গেছে। মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এক, আর কাজ করেছে আারেক। ঠিক একইভাবে তারাও (জামায়াতে ইসলামী) করেছে। এরপরে আমরা দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ যে আন্দোলন করল, জ্বালাও-পোড়াও যে আন্দোলন হয়েছিল, সেই আন্দোলন আওয়ামী লীগের সাথে তারাও (জামায়াত) করেছে।”

রিজভী নব্বইয়ের দশকের ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় ওই সময়ে তারা (জামায়াত) হত্যাও করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র টিটোকে শিবির (ইসলামী ছাত্র শিবির) গুলি করে হত্যা করেছিল, ১৯৯৫-৯৬ সালে যে আন্দোলন হয়েছিল, এটা তো কারো ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে যাওয়া… ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) যেতে চাননি, তাদের (জামায়াত) নেতারা বাধ্য করেছিল, না হলে তারা স্বতন্ত্রভাবে করবে।”

তিনি আরও বলেন, “এদেশের মানুষ মধ্যপন্থি, এদেশের মানুষ ধর্মভীরু, কিন্তু গণতন্ত্রপ্রিয়। তারা কথা বলতে চায় নির্ভয়ে, তারা এক-দুই বেলা কম খেলেও কণ্ঠের আওয়াজ তীব্র করতে চায়। সেদেশের মানুষকে জোর করে ফ্যাসিবাদের নতুন ধারায় কেউ যদি মনে করে যে নিয়ে আসতে চাইবে, এটা জনগণ হতে দেবে না।”

‘টেলি সংলাপ ভয়ঙ্কর’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেলিফোন কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত অডিও শুনলে যে কেউ শিউরে উঠবে।

তিনি বলেন, “আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি, আন্দোলন করেছি, রাজনীতি করেছি আমরা প্রত্যেকে মৃত্যুর মুখোমুখি ছিলাম। শেখ হাসিনার বর্বরতা আমরা স্বচক্ষে দেখেছি, নিজেরা উৎপীড়নের শিকার হয়েছি, দিনের পর দিন রিমান্ডে থেকেছি, মাসের পর মাস জেলখানায় থেকেছি। তার ভয়াবহতা আমরা দেখেছি। কিন্তু এর গভীরে যে আরও ভয়াবহতা ছিল, তারা একটি আন্দোলনকে দমানোর জন্য কী ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে নিয়ে গিয়েছিল, সেটা এখন প্রতিদিনকার যে আলামতগুলো আদালতে জমা হচ্ছে, সেখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তা থেকে বোঝা যায়।”

রিজভীর দাবি, “যদি এই ফ্যাসিবাদী শক্তির আবার পুনরুত্থান ঘটে, তাহলে ৫ অগাস্টের আন্দোলনকামী মানুষ, গণতন্ত্রকামী মানুষের কী ভয়ঙ্কর পরিণতি ভোগ করতে হবে, সেটা চিন্তা করে শরীরের লোম শিউরে উঠে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার নির্দেশ দিচ্ছেন, যত সরকারি ভবনে আগুন জ্বালিয়েছে, মেট্রোরেলের স্টেশনে যে আগুন লাগানো হল, সব শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে। সেটা আজ সেই টেলিফোনের কথোপকথন থেকে বেরিয়ে আসছে, সত্য বেরিয়ে আসছে। অথচ ওই সমস্ত নাশকতার ঘটনার দায় তখন আন্দোলনকারী মানুষদের ওপরে চাপানো হয়েছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “আমারকে ওই সময়ে মেট্রোরেল স্টেশনের পোড়ানোর মামলায় আসামি করা হয়েছিল, নজরুল ইসলাম খানসহ আরও অনেকে সে সময়ে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। অথচ এখন আমরা প্রমাণ পাচ্ছি, এইসব ঘটনার সব নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা নিজেই। নাশকতার যে অভিযোগ ওই সময় করা হয়েছে, সেই নাশকতা তিনি (শেখ হাসিনা) নিজে সৃষ্টি করেছেন। তিনি (শেখ হাসিনা) এমন এক সর্বনাশা খেলায় মেতেছিলেন, যার ফলে দেশ, জাতি এবং মানুষের জানমাল বিপন্ন হয়েছিল ওইসময়ে।”

‘উপদেষ্টা-আমলার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন’

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা ও শীর্ষ আমলাদের কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, “আজকে গণমাধ্যমে এসেছে, উপদেষ্টা সজীব ভূঁইয়া (আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া) তার নিজ এলাকায় সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ নিয়েছেন। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এটা এক ধরনের বৈষম্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের এলাকা উন্নয়নের নামে ভবিষ্যতে এমপি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।”

রিজভীর প্রশ্ন, “একজন উপদেষ্টা কিংবা একজন সরকারি উচ্চ পর্যায়ের আমলা কী নিজের এলাকায় হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারি বরাদ্দ নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে পারেন? সারা দেশকে বঞ্চিত রেখে এটি করা সম্পূর্ণরূপে অনৈতিক এবং নীতিবিরোধী। আমরা শুনেছি, কেবিনেট সচিব একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুগত। তিনি হয়ত অবসরের পরে নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন। এটি দুঃখজনক এবং সরকারি শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতার পরিপন্থি।”