তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো সংঘাতের জন্য মুখিয়ে রয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার অবস্থানের কারণে এ পর্যন্ত তারা সরাসরি সংঘাতে জড়াচ্ছে না। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যদি এই সংঘাতের সঙ্গে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ যুক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
শনিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিএমএ ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংলাপে ‘মাজার সংস্কৃতি: সহিংসতা, সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনায় মাহফুজ আলম এসব কথা বলেন। সংলাপের আয়োজন করেছে সুফি সম্প্রদায়ের ওপর গবেষণা করা প্ল্যাটফর্ম ‘মাকাম’। প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নিজেই।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, তিনি শুনেছেন আওয়ামী লীগ ‘দরবারগুলোর’ সঙ্গে সংযোগ তৈরি করার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, দরবারগুলোকে বোঝানো হচ্ছে যে, অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের সময়ে মাজার ভেঙে দেওয়া হচ্ছে এবং মসজিদ থেকে বের করা হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, এ ধরনের বিষয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ইস্যু নয়; এটি ৫০ বছর ধরে চলছে। যখন সরকার পরিবর্তন হয়, মসজিদ কমিটি এবং ইসলামী ফাউন্ডেশনের গভর্নিং কমিটি বদল হয়।
মাহফুজ আলম বলেন, রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ চলে গেলেও সামাজিক জায়গায় ফ্যাসিবাদ এখনও রয়ে গেছে। দেশে ইসলামের সব ধারার মধ্যে সংলাপ ও সংযোগ তৈরি না হলে রাষ্ট্র শঙ্কার মধ্য দিয়ে এগোবে। তিনি বলেন, দেশে মুসলিমদের ৯০–৯২ শতাংশ বিভিন্ন তরিকায় বিভক্ত। রাজনৈতিক নেতারা কখনোই তাদের সমন্বয় নিয়ে ভাবেননি; বরং কওমি ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন ঘটিয়েছেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছরে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আদর্শিক বিরোধিতার জায়গা থেকে সুফি সম্প্রদায়ের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংযোগ ঘটেছে। আওয়ামী লীগ তাদের সুরক্ষা দেবে এবং তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। এই পরিমণ্ডলেই ধর্মীয় রাজনীতি আটকে গেছে। কওমিরাও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়েছে।
দেশে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের দূতাবাসগুলোর সংযোগ রয়েছে উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, ‘কিছু দূতাবাস চায় মাজারগুলো ধ্বংস হোক। একধরনের রাজনৈতিক ও আদর্শিক প্রভাব এখানে আছে।’ তিনি বলেন, ধর্মীয় জনগোষ্ঠী লড়াই করবে বা হিংসা ঘটাবে—এমন ভয় না পেয়ে রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক ও নীতিগত দিক থেকে এই সংকটগুলো মোকাবিলা করতে হবে, না হলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে।
মাহফুজ আলম বলেন, জনগণের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে যে এক বছরে কিছুই করা হয়নি। এই ক্ষোভ থেকে পাল্টা প্রতিহিংসা ভাবলে ভালো কিছু হবে না। মাজারে হামলার পর অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এবং এখন সমীক্ষা করে মাজারগুলোকে সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি মাজার পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান মামলা করার জন্য। তিনি বলেন, এই সংস্কৃতি যদি টিকে থাকে, তাহলে অন্য কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলে তাদের ইসলামও মসজিদ ধ্বংসের হাতিয়ার হয়ে যাবে। আজ সুফিদের ওপর হামলা হতে পারে, আগামীকাল কওমিদের ওপর হতে পারে। এটি চলতে দিতে পারা যায় না।
সংলাপের শেষে একজন সাংবাদিক মাহফুজ আলমকে প্রশ্ন করেন, তিনি কখন পদত্যাগ করবেন। যেহেতু এটি আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না, তাই তথ্য উপদেষ্টা এ প্রশ্নের উত্তর দেননি।
