নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় ও মাঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রথমবারের মতো ‘নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিলনায়তনে শনিবার সম্মেলনটি হবে। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনসহ চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত থাকবেন।
সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের জন্য ‘ইলেকশন কমিশন সার্ভিস’ চালুর বিষয়ে আইন সংশোধনে সরকারের সায় পাওয়ার পর। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এ ‘মিলনমেলায়’ কর্মকর্তারা নিজেদের দাবি তুলে ধরার পাশাপাশি ভোটের প্রস্তুতির দিক-নির্দেশনা পাবেন। সম্মেলন ঘিরে ইসি কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
ইসি সচিবালয়ের পাশাপাশি ১০ আঞ্চলিক ও জেলা অফিস, পাঁচ শতাধিক থানা/উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে পাঁচ হাজারের বেশি লোকবল রয়েছে। এছাড়া এনআইডি শাখাতেও হাজারের বেশি লোকবল কর্মরত। এরমধ্যে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার সংখ্যা আট শতাধিক।
২০০৭-২০০৮ সালে ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও এনআইডি প্রদানের প্রক্রিয়া থেকে ইসি কর্মকর্তাদের এনআইডি সেবার কাজে সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে। তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সার্ভার স্টেশন নির্মাণ ও আধুনিকায়নের ব্যবস্থা নেয় সরকার।
এরপর এনআইডি সেবা নিয়ে ‘টানাটানি’ এবং ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বিষয়ে নানা দাবিতে সক্রিয় হন ইসি ও প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। তারা নির্বাচন কমিশন সার্ভিস গঠন, সংসদ নির্বাচনে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান, পদ সৃষ্টি ও আপগ্রেডেশন, প্রয়োজনীয় লজিস্টিকসহ প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম অনুমোদন এবং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০২৩ বাতিল করে জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম ইসির হাতে রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন।
এ পরিস্থিতিতে ২০০৯ সালের আইন সংশোধন করে ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ গত ১৮ সেপ্টেম্বর উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন পাওয়ায় ইসি সার্ভিস গঠনের পথ সুগম হয়েছে।
বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিইসিওএ) আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, “অ্যাসোসিয়েশেনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন হচ্ছে। এতে দেশের আট শতাধিক প্রথম শ্রেণির নিজস্ব কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করছেন। সম্মেলনে নিজেদের কথা তুলে ধরা হবে এবং ভোট সামনে রেখে ইসির দিক-নির্দেশনাও সবাই পাবেন।”
৪৫০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব
নির্বাচনি ডেটাবেসের জন্য উপজেলা/থানা, জেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় এবং সার্ভার স্টেশন নির্মাণের একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে ইসি। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিকল্পনা উন্নয়ন ও গবেষণা শাখা থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, প্রকল্পটি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়া গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, যা পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পে একটি আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়, তিনটি জেলা নির্বাচন কার্যালয়, ৪৬টি উপজেলা নির্বাচন অফিস ও সার্ভার স্টেশন নির্মাণ এবং মেট্রোপলিটন থানার জন্য ১৬টি ‘অফিস স্পেস’ কেনার কথা বলা হয়েছে।
