- কয়েকটি দল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে না যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে
সংস্কার বিষয়ক সংলাপে নেওয়া সিদ্ধান্ত যাতে পরবর্তী সরকারের সময়ও বাস্তবায়ন হয়, তা নিশ্চিত করতে জাতীয় জুলাই সনদ–২০২৫ সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের তফসিলে যুক্ত করার অঙ্গীকার রাখা হয়েছে এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলে।
মঙ্গলবার রাতে ৪০ পৃষ্ঠার এই সনদের কপি ৩৩টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে দলগুলো সনদে স্বাক্ষর করবে। তবে কয়েকটি দল ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠানে না যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।
কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে,
“রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর চূড়ান্ত ভাষ্য আপনার অবগতির জন্য পাঠানো হল।”
সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স জানান, রাত পৌনে ৯টার দিকে তারা সনদের কপি হাতে পেয়েছেন। তিনি বলেন,
“এই মাত্র হাতে পেলাম, দল বা জোটের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। ভূমিকা অংশে ইতিহাস যথাযথভাবে উপস্থাপিত হয়নি—এ কথাই আমরা আগেও বলেছিলাম।”
তিনি আরও বলেন,
“এই সনদে সংবিধানের চার মূলনীতিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যার বিরোধিতা আমরা শুরু থেকেই করছি। আমরা তখনও বলেছি, চার মূলনীতির প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কিন্তু এখানে চার মূলনীতি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।”
বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও ভিন্নমত রয়েছে বলে জানান প্রিন্স।
“আমরা বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে যা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তা এখানে নেই। সুতরাং স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাওয়া হবে কি না, সেটা দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। তবে এই ধারা অব্যাহত থাকলে আমাদের পক্ষে এই সনদের পক্ষে কথা বলার মতো পরিবেশ নেই।”
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, তারা সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। চূড়ান্ত সনদের বিষয়বস্তুর সঙ্গে তাদের ‘তেমন ভিন্নমত নেই’ বলেও জানান তিনি।
বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা জানান,
“সনদের কপি পেয়েছি, তবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার অঙ্গীকারনামায় আমরা শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছি। আমরা স্বাক্ষর করব আর তারা তাদের মতো করে বাস্তবায়ন করবে—এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া হবে কি না, সেটা দল ও জোটগতভাবে সিদ্ধান্ত নেব।”
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন,
“আজ আমাদের কাছে পাঠানো এই চিঠির মাধ্যমে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ছয় মাসের আলোচনার সফল পরিসমাপ্তি ঘটবে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে। এই সনদ প্রণয়নে প্রচেষ্টার জন্য আমরা ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, অন্যান্য সদস্য এবং সংস্কার কমিশনের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।”
সাত দফা অঙ্গীকারনামার ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এতে সই করলে রাজনৈতিক দলগুলো এই সনদ নিয়ে আদালতে কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, এই সনদ পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে “তফসিল হিসেবে বা যথোপযুক্তভাবে” সংযুক্ত করা হবে এবং স্বাক্ষরকারী দলগুলো এর বৈধতা বা প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আদালতে কোনো প্রশ্ন তুলবে না।
অঙ্গীকারনামায় আরও বলা হয়েছে, অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য যেসব বিষয় রয়েছে, তা অন্তবর্তীকালীন সরকারই বাস্তবায়ন করবে।
Final July Chater 14 October 2025