বগুড়ায় এনসিপির সমন্বয় সভাস্থলে ককটেল হামলা, দুইটি বিস্ফোরণ

বগুড়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের উপস্থিতিতে দলের সমন্বয় সভাস্থলে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বগুড়া জেলা পরিষদ মিলনায়তনের বাইরে এই হামলা ঘটে।

পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীরা পরপর দুটি ককটেল ছুঁড়ে, যার মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয়। অন্যদিকে, এনসিপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, হামলাকারীরা তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে দুটি বিস্ফোরিত হয়েছে।

এনসিপি বগুড়া জেলা কমিটির সমন্বয়কারী শওকত ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত সমন্বয় সভায় সারজিস আলম বক্তব্য দেওয়ার আগ মুহূর্তে বাইরে পরপর তিনটি ককটেল হামলা করা হয়। এর মধ্যে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। তিনি বলেন, সমন্বয় সভা ভণ্ডুল করতেই এই হামলা করা হয়েছে এবং এর জন্য ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের দায়ী করেছেন।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান বাসির প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন, জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সভা চলাকালীন করতোয়া নদীর দিক থেকে দুটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এর মধ্যে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। হামলাকারীদের শনাক্ত এখনও সম্ভব হয়নি।

হামলার পর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় সংলগ্ন মিলনায়তনের বাইরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থান নেয়। এরপর মিলনায়তনের ভেতরে সারজিস আলমের উপস্থিতিতে সমন্বয় সভার কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে শুরু হয়।

সভা শেষে মিলনায়তন থেকে বেরিয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে, তাদের আস্ফালন আমরা দেখতে পাচ্ছি। মিলনায়তনের ভিতরে সভা চলাকালীন এই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তারা যথাযথ সক্রিয়তা দেখাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অগ্নিকাণ্ডকে স্বাভাবিক বিষয় মনে করা যায় না। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর নির্দেশনা দিতে হবে। না হলে ব্যর্থতার দায় সরকারকেও নিতে হবে।’

পুলিশকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘কোনো দলের প্রশাসন হয়ে উঠবেন না, জনগণের প্রশাসন হোন। ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে আরেকটি ঘটনা ঘটলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না। নির্বাচনের আগে চক্রান্তকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। কোনো বিশেষ দলকে সুবিধা দিলে তার দায়ভার পুলিশকেই নিতে হবে।’

এর আগে বেলা তিনটার দিকে বগুড়ার ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে এনসিপির অস্থায়ী জেলা কার্যালয় উদ্বোধন করেন সারজিস আলম। উদ্বোধনের আগে কার্যালয় চত্বরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর এনসিপির আস্থা নেই।

সারজিস আলম বলেন, আগামী নির্বাচন কখন, কীভাবে, কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের মানুষ। জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়া হলে, বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে এবং বিচারিক প্রক্রিয়া দৃশ্যমানভাবে চললে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। তখন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, দেশেও এখনো কোনো রাজনৈতিক দল এককভাবে শক্তিশালী নয়। মাঠের বাস্তবতায় পার্থক্য রয়েছে। আগামীতে আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিস্টমুক্ত আধিপত্যবাদের বিপক্ষে বিএনপি ও জামায়াত এককভাবে নেতৃত্ব দিতে পারবে না। এনসিপিকে রাজপথ ও সংসদে সমানভাবে প্রয়োজন হবে।