বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতের কন্যাকে দলবেঁধে ধর্ষণ: তিন আসামির কারাদণ্ড

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিহত এক ব্যক্তির কিশোরী মেয়েকে দলবেঁধে ধর্ষণের মামলায় তিন আসামিকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার সকালে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিলুফার শিরিন এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে দুজনকে ১৩ বছর এবং একজনকে ১০ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

রায়ে বলা হয়, দণ্ডপ্রাপ্তরা অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় শিশু আদালত আইনের আওতায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, তিন আসামিকে ধর্ষণ মামলায় ১০ বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুজনকে পর্নগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে আরও তিন বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২৫ সালের ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নের নলদোয়ানি গ্রামে নানাবাড়ি যাওয়ার পথে ওই কিশোরীকে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়। ঘটনার পর মেয়েটি নিজেই বাদী হয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে দুমকি থানায় মামলা করে।

তদন্ত শেষে দুমকি থানার ওসি (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম চলতি বছরের ১ মে তিন আসামির বিরুদ্ধে পটুয়াখালীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এর আগে, কিশোরীর বাবা ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গুলিবিদ্ধ হন এবং ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরবর্তীতে মানসিক আঘাতে ভুগে মেয়েটি ওই বছরের ২৬ এপ্রিল ঢাকার শেখেরটেক এলাকায় আত্মহত্যা করে। পরে তাকে নিজ গ্রামে শহীদ বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়।

রায় ঘোষণার পর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, “মোট ১৬ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা ও যুক্তিতর্ক শেষে আদালত এ রায় দিয়েছেন। আমরা মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি, যা কিছুটা হলেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে।”

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান টোটন বলেন, “এই রায় সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা—অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে, সে যত প্রভাবশালীই হোক না কেন।”

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম তালুকদার ও গাজী আল মামুন জানান, তারা রায়ে সন্তুষ্ট নন এবং রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

রায় ঘোষণার সময় আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত সাধারণ মানুষ, নারী অধিকারকর্মী ও মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যরা আদালতের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ন্যায়বিচারের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।