চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিক্ষোভ

পার্বত্য অঞ্চলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে— এমন অভিযোগ তুলেছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পেশাজীবী ও নাগরিক সংগঠন।
শনিবার দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদ মোড়ে ‘বন্দর রক্ষায় চট্টগ্রামের শ্রমিক-ছাত্র-পেশাজীবী-নাগরিকবৃন্দ’-এর ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এই অভিযোগ করা হয়।
‘লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্তের প্রতিবাদে’ আয়োজিত এ সমাবেশ থেকে ষড়যন্ত্র ঠেকাতে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।

গণমুক্তি ইউনিয়নের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাজা মিঞা বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর লাভজনক ও পরিচালনাযোগ্য প্রতিষ্ঠান। তবুও আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে নিউমুরিং টার্মিনাল ও লালদিয়ার চর বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সরকার বন্দর এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে শুধু এই চুক্তি বিনা বাধায় বাস্তবায়নের জন্য। আওয়ামী লীগ সরকার পূর্বে বিনা টেন্ডারে ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে নিউমুরিং টার্মিনাল হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল।”
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “অভ্যুত্থানের পরও কেন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে সরকার হাঁটছে— এর জবাব দিতে হবে।”

ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, “চট্টগ্রামের শ্রমিক, পেশাজীবী ও ছাত্রসমাজ আজ ঐক্যবদ্ধ। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে দেশবিরোধী তৎপরতা রুখে দেওয়া হবে।”

শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) যুগ্ম সমন্বয়ক রিজওয়ানুর রহমান জানান, “চট্টগ্রাম বন্দর বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি লাভ করে। তারপরও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে বন্দর তুলে দেওয়ার আগে তাদের মুনাফা নিশ্চিত করতে ট্যারিফ ৪১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় কৌশলগত সম্পদ বিদেশি বা বেসরকারি নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই পরিচালিত হওয়া উচিত।”

বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সমন্বয়ক শফি উদ্দিন কবির আবিদ বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বন্দরের টার্মিনাল লিজ দেওয়ার এখতিয়ার নেই। চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানগত গুরুত্ব দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। সরকার যে দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা সন্দেহ সৃষ্টি করছে— তারা আসলে কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে?”

বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সেক্রেটারি ইব্রাহিম খোকন বলেন, “বাংলাদেশে একাধিক সমুদ্রবন্দর নেই। দেশের আমদানি-রপ্তানির মূল দায়িত্বে থাকা এই বন্দর কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়া জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।”

সমাবেশে বক্তব্য দেন ডক শ্রমিক দলের সেক্রেটারি আখতারউদ্দিন সেলিম, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সেক্রেটারি জাহিদউদ্দিন শাহীন, গণঅধিকার চর্চা কেন্দ্রের মশিউর রহমান খান, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার পরিষদের প্রকৌশলী সিঞ্চন ভৌমিক, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সেক্রেটারি জাহেদুন্নবী কনক, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের নেতা সাইফুর রুদ্র, বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি হুমায়ুন কবির, আবদুল্লাহ আল মামুন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ধ্রুব বড়ুয়া এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নগর দফতর সম্পাদক লাবণী আকতার।

গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি সত্যজিৎ বিশ্বাস সমাবেশটি পরিচালনা করেন।
এ সময় বন্দর এলাকার শ্রমিক-কর্মচারীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, ছাত্র, শ্রমিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।