চীন এবং দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ঝুঁকি ব্যাখ্যা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন।
ওয়াশিংটনে মার্কিন সেনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটিতে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত শুনানিতে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রশ্নে বাংলাদেশের জন্য চীন কর্তৃক সাবমেরিন ঘাঁটির ‘সংস্কার’ এবং ‘২০টি চীনা যুদ্ধবিমান কেনা’র প্রসঙ্গ তোলা হলে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, “পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন, এবং রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পেলে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তাদের মেরিটাইম খাত ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে সম্পৃক্ততার ঝুঁকি বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করব।”
তিনি আরও বলেন, “একইসঙ্গে আমি তুলে ধরব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে, বিশেষ করে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার হলে কী ধরনের সুফল ও সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।”
লিখিত বক্তব্যে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন উল্লেখ করেন, বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ বাংলাদেশ প্রায়ই বড় প্রতিবেশিদের ছায়ায় ঢাকা পড়ে থাকে, ফলে যথাযথ আন্তর্জাতিক মনোযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। তিনি বলেন, “আমি ফরেন সার্ভিসে কাজের অভিজ্ঞতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতি নিয়ে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছি, যার মধ্যে ঢাকায় দায়িত্ব পালনও অন্তর্ভুক্ত। ফলে আমি বাংলাদেশের গুরুত্ব এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে এর তাৎপর্য ভালোভাবে বুঝি।”
তিনি বলেন, “কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ এখন অবাধ, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি অপরিহার্য অংশীদার হিসেবে উঠে এসেছে।”
ক্রিস্টেনসেনের মতে, বাংলাদেশ বর্তমানে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে’ অবস্থান করছে। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের অগাস্টে ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলন ১৫ বছরের শাসনের পতন ঘটিয়েছে। এখন দেশটি নতুন সরকার ও নতুন দিকনির্দেশনা পেতে আগামী বছরের শুরুতে ভোট দিতে যাচ্ছে— যা হবে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বাংলাদেশের উজ্জ্বল ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় সহায় থাকবে। রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ নিশ্চিত হলে, আমি ঢাকায় দূতাবাস টিম নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে কাজ করব।”
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সম্পর্কেও আশাবাদ ব্যক্ত করে ক্রিস্টেনসেন বলেন, “রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পেলে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা ও বিনিয়োগে উন্নতি, বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে কাজ করব।”
