নির্বাচন কমিশন (ইসি) নতুন তিনটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দলগুলো হলো— বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, কমিশন ইতোমধ্যে নিবন্ধনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আগামীকাল (বুধবার) পত্রিকায় এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তিনি জানান, ১২ নভেম্বর পর্যন্ত দাবি-আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তির পর দলগুলোকে চূড়ান্তভাবে সনদ প্রদান করা হবে।
দলীয় প্রতীক নিয়ে অনিশ্চয়তা
প্রতীক বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চেয়েছে ‘শাপলা কলি’, একটি দল চেয়েছে ‘কাঁচি’, এবং আরেকটি দল প্রতীক পরিবর্তনের আবেদন করেছে।
তিনি বলেন, “প্রতীকের বিষয়ে এখনো কিছু নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময়ই এটি জানানো হবে।”
চূড়ান্ত গেজেট নভেম্বরের মাঝামাঝি
আখতার আহমেদ আরও জানান, দাবি-আপত্তির সময়সীমা শেষ হবে ১২ নভেম্বর, এবং ১৪ থেকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।
নতুন দলের পটভূমি
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা কয়েকজনকে নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এরপর থেকেই সনদ ও প্রতীক নিয়ে দলটি সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।
অন্যদিকে, ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীন কারাগার থেকে বেরিয়ে গত ১৭ এপ্রিল ‘বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি’ নামে নতুন দল গঠন করেন। পরে নামসাদৃশ্য নিয়ে আপত্তি ওঠায় দলটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি’।
আরও আগে, ২০১৩ সালের ১২ এপ্রিল বাসদ (মার্কসবাদী) গঠিত হয় যখন তৎকালীন বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বের বিরোধিতা করে বেরিয়ে আসেন মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ও শুভ্রাংশু চক্রবর্তীসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি
আগামী বছর রোজার আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এর আগে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। তবে দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়া কিছুটা পিছিয়ে গেছে, যদিও ইসির রোডম্যাপে এ কাজ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
ইসির আহ্বানে এ বছরের ১০ মার্চ নতুন রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দেয়। একদফা সময় বাড়ানোর পর ২২ জুনের মধ্যে মোট ১৪৩টি দল আবেদন করে। প্রাথমিক যাচাইয়ে শর্ত পূরণ না করায় বাদ পড়ে ১২১টি দল; বাকি ২২টির বিষয়ে মাঠপর্যায়ে তদন্ত চালায় ইসির কমিটি।
৩০ সেপ্টেম্বর কমিশন জানায়, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগ নিবন্ধনের যোগ্যতা অর্জন করেছে। কিন্তু পরে এনসিপির ‘শাপলা’ প্রতীক নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় কমিশন প্রতীকের তালিকায় ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করে, যা নিয়ে শেষে রাজি হয় এনসিপি।
অন্যদিকে, জাতীয় লীগের নিবন্ধন নিয়ে আপত্তির পর ইসি পুনঃতদন্ত চালায় এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমে ধারাবাহিকতা না থাকায় দলটিকে বাদ দেওয়া হয়, বলেন ইসি সচিব।
আদালতের নির্দেশে অপেক্ষমান নিবন্ধন
এদিকে, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিকে (বিএনআইপি) নিবন্ধন দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে কমিশন জানিয়েছে, এ বিষয়ে তারা আদালতের আদেশের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
নিবন্ধন প্রাপ্ত দলের ইতিহাস এক নজরে
- ২০০৮ সালে এটিএম শামসুল হুদা কমিশন ৩৯টি দলকে নিবন্ধন দেয়।
- ২০১৩ সালে কাজী রকিবউদ্দিন কমিশন আরও দুটি দলকে নিবন্ধন দেয়।
- কে এম নূরুল হুদা কমিশন কোনো নতুন দলকে নিবন্ধন না দিলেও আদালতের আদেশে কয়েকটি দল পরে যুক্ত হয়।
- কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দুটি দলকে নিবন্ধন দেয়।
- ২০০৯ সালে সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা না দেওয়ায় ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল হয়।
- ২০১৩ সালে আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে।
- ২০১৭ সালে ইসি মাঠ পর্যায়ে তদন্ত চালিয়ে পিডিপি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ও জাগপার নিবন্ধন বাতিল করে।
- গণঅভ্যুত্থানের পর এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য ও গণসংহতি আন্দোলন নিবন্ধন পায়।
- বর্তমান কমিশনের মেয়াদে আদালতের আদেশে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বিএমজেপি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি নিবন্ধন পায়।
- এ বছর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনর্বহাল হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে।
- সবশেষ আদালতের নির্দেশে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) পুনরায় নিবন্ধন পেয়েছে।
বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫৩টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত, আর ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ও পিডিপির নিবন্ধন বাতিল রয়েছে।
