ভারতের আহমেদাবাদে ২৪২ আরোহী নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় সবার মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পুলিশপ্রধান।
বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুরে আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড়াল দেওয়ার পরই দুর্ঘটনায় পড়ে।
উড়োজাহাজটিতে ২৩২ জন যাত্রী ও ১০ জন ক্রু ছিলেন বলে ভারতের সিভিল এভিয়েশন দপ্তর জানিয়েছে।
উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর উড়োজাহাজটি উচ্চতা বাড়াতে না পারায় নিচে নেমে আসে এবং বিমানবন্দরের কাছে একটি মেডিকেল হোস্টেলের উপর বিধ্বস্ত হয়। সেখানে অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, হোস্টেল ভবনে আরও অনেকে আটকা পড়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওই উড়োজাহাজের যাত্রীদের মধ্যে ৫৩ জন ব্রিটিশ নাগরিক, একজন কানাডার ও সাতজন পর্তুগালের নাগরিক ছিলেন বলে জানিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। বাকিরা সবাই ছিলেন ভারতীয় নাগরিক।
আহমেদাবাদের পুলিশপ্রধান জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার ঘটনায় কারও জীবিত থাকার সম্ভাবনা নেই। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ২০৪টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তবে তারা সবাই যাত্রী কিনা তা নিশ্চিত নয়। কারণ, উড়োজাহাজটি একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের উপর পড়েছে এবং সেখানেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সূত্রে জানা গেছে, রানওয়ে ২৩ থেকে বেলা দেড়টার কিছু পর উড়োজাহাজটি উড্ডয়ন করে এবং এরপরই ‘মে ডে’ সংকেত দেয়। তারপর আর কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, উড়োজাহাজটি উচ্চতা অর্জনে ব্যর্থ হয়ে নিচ দিয়ে উড়ছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ভূমিতে আছড়ে পড়ে। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে পুরো বিমানটি আগুনে পুড়ে যায়।
বিমানটি পাঁচ মিনিটের মতো আকাশে ছিল এবং স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৩৮ মিনিটে বিধ্বস্ত হয়। এর পরপরই আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করে এক্সে দেওয়া পোস্টে জানিয়েছেন, তিনি মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
বিধ্বস্ত উড়োজাহাজে ৫৩ জন ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন জানিয়ে এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “আহমেদাবাদের ভয়ঙ্কর এই ঘটনায় আমি ও আমার স্ত্রী গভীরভাবে শোকাহত। যেসব পরিবার প্রিয়জনের খোঁজে রয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের প্রার্থনা ও সমবেদনা রইল।”
তিনি আরও বলেন, “এ ঘটনায় জরুরি পরিষেবাগুলোর সাহসী তৎপরতা এবং সহায়তাকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।”
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করে জানান, তিনি পরিস্থিতির হালনাগাদ খোঁজখবর রাখছেন। পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী লুইস মনটেনেগ্রোও ভুক্তভোগীদের প্রতি সমবেদনা ও সংহতি জানিয়েছেন।
উড়োজাহাজটি যে ভবনে পড়েছে, সেটি আহমেদাবাদের বিজে মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের হোস্টেল। বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে, হোস্টেল ভবনটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ ভবনের ক্যান্টিন এলাকায় গিয়ে আটকে আছে, যেখানে এখনও টেবিলে খাবারসহ প্লেট দেখা যাচ্ছে, যদিও সব ধুলায় ঢেকে গেছে। হোস্টেলের অন্তত ১১ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
আহমেদাবাদ পুলিশ জানিয়েছে, হোস্টেলটিতে স্থানীয় মেডিকেল পেশাজীবীরা থাকতেন। ফায়ার সার্ভিস ও উদ্ধারকারী দল সেখানে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর হোস্টেলের ৫০ থেকে ৬০ জন ছাত্রকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পাঁচজন নিখোঁজ এবং দুইজনকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।
বোয়িং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা দুর্ঘটনার প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে এবং আরও তথ্য সংগ্রহে কাজ করছে।