ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণ বিধিমালা ২০২৫’ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বিধিমালা অনুযায়ী, এবার নির্বাচনি প্রচারে প্রার্থীরা পোস্টার ব্যবহার করতে পারবেন না। আর আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ জরিমানা ধরা হয়েছে দেড় লাখ টাকা। তবে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে প্রার্থিতা বাতিলের বিধানই থাকছে।
বৃহস্পতিবার সপ্তম কমিশন সভায় আচরণবিধিতে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়, যেখানে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ আমলে নেওয়ার কথা বলছে ইসি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনের সভাপতিত্বে সকাল সোয়া ১১টা থেকে তিন ঘণ্টা ধরে এ সভা চলে।
সভার পর নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “খসড়া আচরণবিধিতে আজ কমিশন অনুমোদন দিয়েছে। এর কয়েকটি বিষয় রয়েছে, যেগুলো গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধন ও ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেজন্য এ বিধিমালার খসড়া শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দিয়ে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।”
আচরণবিধি অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা কোনো প্রার্থীর হয়ে প্রচারে যেতে পারবেন না। এবার সব প্রার্থীর ইশতেহার ঘোষণা হবে একসঙ্গে। ‘পরিবেশবান্ধব’ নতুন কিছু বিধানও যুক্ত করা হয়েছে।
২০০৮ সালে প্রণীত ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার’ আলোকে এবার বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
কী করা যাবে, কী যাবে না
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “প্রার্থীর প্রচারে বিলবোর্ডের ব্যবহার অতীতে ছিল না; এবার যুক্ত করা হয়েছে। পোস্টার ব্যবহার বন্ধে সংস্কার কমিশনেরও একটা প্রস্তাব ছিল। আমরাও একমত। আর ব্যানার ও ফেস্টুনের ব্যবহার নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদেরও যোগ করা হয়েছে। ফলে তারা প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামতে পারবেন না।
“তাদের জন্য বিভিন্ন সরকারি সুবিধা, যেমন সার্কিট হাউস, ডাক বাংলো ও রেস্ট হাউস ব্যবহারে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।”
প্রচারে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারে জোর দেওয়া তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “ভোটার স্লিপের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। টিশার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদির ব্যাপারে অতীতে যে বিধিনিষেধ ছিল, এবার একটু শিথিল মনোভাব দেখানো হয়েছে।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের ব্যাপারে তিনি বলেন, “এ ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ আনা যাবে না।”
তিনি জানান, মাইকে প্রচারের সময় শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলে রাখতে হবে। প্রচারণার সময় থাকছে তিন সপ্তাহ। টিভিতে সংলাপের সুযোগ রাখা হয়েছে।
এছাড়া প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে সভাপতি বা সদস্য পদে থাকলে পদত্যাগ করতে হবে।
“বিধিমালা লঙ্ঘনে যে স্বাভাবিক শাস্তি ছিল, ছয় মাস কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাক জরিমানা। এবার জরিমানা সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকার প্রস্তাব রয়েছে।”
আচরণবিধি মেনে চলার ব্যাপারে দলের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামাও নেবে ইসি।
আচরণবিধির ‘গুরুতর’ অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিওতে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রয়েছে। আগে আচরণবিধিতে আরপিও অনুচ্ছেদটি ছিল না, এটা এবার যুক্ত করা হয়েছে।
সব প্রার্থীকে এক মঞ্চে রাখার বিষয়ে সানাউল্লাহ বলেন, “কমন প্লাটফর্ম বলতে আমাদের যেসব রিটার্নিং অফিসার রয়েছেন সংশ্লিষ্ট আসনে, তিনি সব প্রার্থীকে নিয়ে একটি প্লাটফর্ম থেকে একদিনে তাদের ইশতেহার বা ঘোষণাপত্রগুলো পাঠ করার ব্যবস্থা করবেন।”
সীমানা নিয়ে আলোচনা আগামী সপ্তাহে
ইতোমধ্যে ৭৫টি সংসদীয় আসন নিয়ে ছয় শতাধিক আবেদন পেয়েছে কমিশন।
বৃহস্পতিবারের কমিশন সভায় সংসদীয় এলাকার জিআইএস (জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম) সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ উপাত্ত না পাওয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ইসি।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, সভার আলোচ্যসূচিতে ছিল রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্তকরণ; আরেকটি বিষয় ছিল সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত।
“সময়ের অভাবে এবং কিছু উপাত্ত এখনও বাকি থাকায় আলোচনাটা আজ আমরা এগিয়ে নিতে পারিনি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ সংসদীয় আসনের বিষয়টা সম্পন্ন হবে।”