জবি’তে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের দুই নেতা ও সহকারী প্রক্টরের ওপর হামলার অভিযোগ ছাত্রদলের বিরুদ্ধে

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের দুই নেতা ও একজন সহকারী প্রক্টরকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান মারধরের শিকার সহকারী প্রক্টর ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রদল নেতারা বলেন, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতারা এক ছাত্রলীগ নেতাকে ক্যাম্পাসে ‘পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিচ্ছেন’, এ অভিযোগ নিয়েই তাদের সঙ্গে বিতণ্ডা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ছড়ানো হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন বলেন, বৃহস্পতিবার ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে এক ছাত্রলীগ নেতা আসেন। তখন সেখানে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও সেখানে গেলে হট্টগোল ও মারামারি শুরু হয়।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “আমরা সাংগঠনিক আলোচনা করছিলাম। হঠাৎ দেখি ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন শহীদ সাজিদ ভবনের নিচে আমাদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফারুকের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। ফারুক ছাত্রলীগকে শেল্টার দিচ্ছে বলে তার কলার ধরে টেনে মারধর করে। আমি জিজ্ঞেস করতে গেলে তারা আমার অণ্ডকোষে লাথি মারে, ফেরদৌসকেও লাথি দেয়। পরে আবার দ্বিতীয় দফায় হামলা চালায়।”

ছাত্রদলের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি আরও বলেন, “যার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ করার অভিযোগ, তাকে কেউ শেল্টার দিচ্ছে না। বরং আমাদের একজন নেতা, যিনি জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিলেন এবং ছাত্র অধিকার পরিষদে ছিলেন, তাকেই ছাত্রলীগের শেল্টার দেওয়ার অভিযোগে মারধর করা হয়।”

ঘটনার পর গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখ্য সংগঠক ফেরদৌস শেখ একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, “আজ ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে জবি ছাত্রদলের একটি অংশ আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। অথচ ৫ অগাস্ট পর্যন্ত আমি ছাত্রদলের সঙ্গেই ছিলাম এবং কোনো কর্মসূচি বাদ দিইনি। এখন নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ায় তারা আমাকে ছাত্রলীগের ট্যাগ দিয়ে আমাদের ও শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছে।”

ফয়সাল মুরাদ ফেসবুকে লেখেন, “ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ আমাকে লাথি মেরেছে। সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন তার দল নিয়ে জুলাইয়ের আহত ফেরদৌস, ফারুকের ওপর হাত তুলেছে। আমাকে ছাত্রলীগ বলে ট্যাগ দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।”

সহকারী প্রক্টর শফিকুল ইসলাম বলেন, “হ্যাঁ, আমার গায়ে হাত তুলেছে এটা সত্য। তবে তার রাজনৈতিক পরিচয় আমি নিশ্চিত নই। সিসিটিভি ফুটেজে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। আমি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দুই পক্ষের মারামারি থামাতে গেলে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে একজন আমার ওপর হামলা করে। আমি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও প্রক্টরকে জানিয়েছি এবং লিখিত অভিযোগও দেব।”

অন্যদিকে ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “ফেরদৌস শেখ আগে ছাত্রদল করলেও এখন অন্য সংগঠনের পোস্টেড নেতা। সে ওই সংগঠনের নির্দেশে ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে পুনর্বাসন করছে। ব্যবস্থাপনা বিভাগে ছাত্রলীগের এক নেতাকে তারা পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিচ্ছে। আমাদের কাছে এটা ঠিক মনে হয়নি। হামলার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন। আমরা সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে লিখিত অভিযোগ দেব।”

প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, “ঘটনা শোনা মাত্রই আমরা প্রক্টরিয়াল বডি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। এখন পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত। শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিষয়টি সমাধান করেছেন। একজন সিনিয়র অধ্যাপকের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”

ঘটনা তদন্তে ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মো. মোশাররফ হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।