ভোটে অনিয়মে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা ফেরাতে চায় ইসি

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটে অনিয়ম হলে নির্বাচন কমিশনের হাতে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।

বৃহস্পতিবার অষ্টম কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, “কেন্দ্র বাতিলের সক্ষমতা ইসির ছিল; যেটা ছিল না সেটা হচ্ছে পুরো নির্বাচনি আসন বন্ধ করার ক্ষমতা। যেটা একসময় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এটাও আমরা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছি এবং আশা করি আমরা এটা ফেরত পাব।”

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইন, হলফনামা, ইসি সচিবালয় আইন, পোস্টাল ব্যালট, ইভিএম, দল নিবন্ধন অগ্রগতি, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সীমানা নির্ধারণসহ সার্বিক বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে ইসি।

সকাল ১১টার পর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসির সভাপতিত্বে এ সভা হয়। চার কমিশনার, ইসি সচিব ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিকাল ৫টায় সভার সার্বিক সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানানো হয়।

সভায় আরপিও সংশোধন প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলেও বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারে আলোচনা হবে।

ভোটে অনিয়ম হলে পুরো নির্বাচনি আসন বাতিলের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবের পক্ষে ইসি। সানাউল্লাহ বলেন, “আগে ছিল পুরো আসন বাতিলের ক্ষমতা, সেটা বাদ দেওয়া হয়েছিল। এখন আমাদের কেবল কেন্দ্র বাতিলের ক্ষমতা আছে। আমরা ফেরত পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি।”

বুধবার প্রধান উপদেষ্টা আইনটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। পরদিন ইসিও জানাল এ বিষয়ে তাদেরও সম্মতি রয়েছে।

তরুণ ভোটারদের আলাদা তালিকা ও বুথ করার বিষয়ে সানাউল্লাহ বলেন, “তরুণদের জন্য আলাদা তালিকার প্রয়োজন নেই। যদি লাগে দেখা যাবে। নারী, অসুস্থ, সিনিয়র সিটিজেনদের মতো তরুণদের জন্যও কোনো প্রস্তাব এলে বিবেচনা করা হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইসি।”

প্রার্থীর হলফনামায় আজীবনের ফৌজদারি মামলার তথ্য সংযোজনের প্রস্তাব এসেছে বলেও জানান তিনি।

৪৪ লাখ নতুন ভোটারকে যুক্ত করে ভোটার তালিকার সম্পূরক খসড়া আগামী সপ্তাহে প্রকাশ করা হবে। দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর আগস্টে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে।

তিনি বলেন, “৪৪ লাখ ৬ হাজার ৬০২ জন নতুন ভোটার পেয়েছি, মৃত ভোটার ২১ লাখ ৩২ হাজার ৫৯০ জন। নারী-পুরুষ ভোটারের ব্যবধান কমে ১৮ লাখে নেমেছে।”

নিবন্ধিত নতুন দলগুলোর আবেদন যাচাই-বাছাই চলছে। সঠিক আবেদনগুলো মাঠপর্যায়ে যাচাই হচ্ছে এবং ত্রুটিপূর্ণদের তথ্য পূরণে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এবার ১৪৪টি দল ১৪৭টি আবেদন করেছে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ নামে আলাদা সার্ভিস গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাত মাসে ৯ লাখ আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে, বাকি আছে ৭৪ হাজার। এনআইডি-তে ধর্ম পরিবর্তন সংক্রান্ত জটিলতাও কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

৩০০ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ২২১টি আসনে কোনো আবেদন আসেনি। ঢাকার আসন সংখ্যা খুব বেশি কমবে না। ভোটার ও জনসংখ্যার ভারসাম্য ধরে সীমানা নির্ধারণ হবে।

তিনি বলেন, শাপলা প্রতীক তালিকায় রাখা হয়নি। নাগরিক ঐক্য ও এনসিপি শাপলা প্রতীক চাইলেও ইসি তা বিবেচনায় নেয়নি।

প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের সুযোগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রবাসীরা অনলাইনে আবেদন করে ভোট দেবেন। ইভিএম কোনো নির্বাচনে আর ব্যবহার হবে না বলে জানান তিনি।