প্রথম একক উড্ডয়নেই প্রাণ গেল ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের

প্রশিক্ষণের সব ধাপ শেষে তৌকির ইসলাম প্রথমবারের মতো একা প্রশিক্ষণ বিমান চালাবেন—এ খবরে পরিবারের সদস্যরা সোমবার সকাল থেকেই আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত ছিলেন। কিন্তু দুপুরের পর সেই বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পান তাঁরা। সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় সব উচ্ছ্বাস। বিকেলে রাজশাহী নগরের উপশহর এলাকায় তৌকিরদের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পরপর কান্নার রোল ভেসে আসছে।

ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের পরিবারের সদস্যদের বিমানে করে রাজশাহী থেকে ঢাকায় নেওয়া হয়। বিকেলে রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে বিমানবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারে তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়।

 

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়ে বৈমানিকসহ ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। নিহত বৈমানিক তৌকির ইসলামের ডাকনাম সাগর। তাঁর পরিবার রাজশাহী নগরের উপশহর ৩ নম্বর সেক্টরের আশ্রয় ভবন এলাকায় ভাড়া থাকেন। তাঁর বাবা তহুরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন, বোন সৃষ্টি ও ভগ্নিপতি সেখানে থাকতেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এলাকায়।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা জানতেন না যে তৌকির ইসলাম মারা গেছেন। তখনও তাঁরা জানতেন, তৌকির ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন। পরিবারের সদস্যরা তৌকিরকে দেখতে ঢাকায় যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাঁরা রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।

তৌকির ইসলামের মৃত্যুর খবরের পর তাঁর বাড়ির সামনে সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকদের ভিড় দেখা যায়। বাসায় তখনো তৌকিরের নানা, নানি ও খালা অবস্থান করছিলেন। ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। মামা মোতাকাব্বির বাইরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক ও আগ্রহী মানুষদের পরিবারের খবর জানাচ্ছিলেন।

মোতাকাব্বির বলেন, তৌকির ইসলাম রাজশাহীর ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পরে পাবনা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে তিনি চাকরিতে যোগ দেন। এক বছর আগে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে বিয়ে করেন।

মোতাকাব্বির আরও জানান, তৌকিরের মা–বাবা ও বোন ঢাকায় রওনা হওয়ার আগে তাঁর মৃত্যুর খবর জানতেন না। তাঁরা তখনও বিশ্বাস করছিলেন, সাগর জীবিত এবং চিকিৎসাধীন।

আইএসপিআর জানায়, দুর্ঘটনা মোকাবিলায় ও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি থেকে জনবিরল এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের দোতলা একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়।