বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনীতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য বিমানবন্দরে ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা সুবিধা চালুর বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বুধবার ঢাকায় সফররত পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন রেজা নাকভি সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, পাকিস্তানে বাংলাদেশের দূতাবাস ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। আপাতত সেখানে এমআরপি পাসপোর্ট কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমও শুরু হবে।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে মাদক ও সন্ত্রাস দমন, পুলিশ প্রশিক্ষণে সহযোগিতা, রোহিঙ্গা ইস্যু, সাইবার অপরাধ দমন এবং বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অভিন্ন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশীদার উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্রমেই সুদৃঢ় হচ্ছে। জবাবে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির আশ্বাস দেন।
সন্ত্রাসবাদ দমনে পাকিস্তানের অগ্রাধিকার ও অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে মহসিন রেজা নাকভি বলেন, “সন্ত্রাস দমন সারা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এতে ব্যর্থ হলে সবার জন্যই হুমকি তৈরি হবে। এ কাজে বাংলাদেশ আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে পারে।”
তিনি জানান, পাকিস্তানের দ্বিতীয় প্রধান সমস্যা মাদক, যা মূলত আফগানিস্তান থেকে আসছে। জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশেরও অন্যতম বড় সমস্যা মাদক, যা মিয়ানমার থেকে প্রবেশ করছে। এ সমস্যা সমাধানে উভয় দেশ পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে।
পুলিশ প্রশিক্ষণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে জানিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এতে উভয় দেশের পুলিশ একাডেমি উপকৃত হবে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একমত পোষণ করে বলেন, সারদা পুলিশ একাডেমি উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন প্রতিষ্ঠান।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেন না, তবে বিশেষ কোডের পাসপোর্ট দিয়ে তাদের শনাক্ত করেন। জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ মানবতার খাতিরে ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, যা একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য বড় বোঝা। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ইসলামাবাদ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের প্রতি পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে শোক ও সমবেদনা জানান।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী ও পাকিস্তান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মোহাম্মদ ওয়াসিফ উপস্থিত ছিলেন।