আসন্ন ‘চব্বিশের জুলাই’ অভ্যুত্থানের আগে গত দেড় দশকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের সন্ত্রাসীদের হাতে নিহতদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এসব ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
ছয় বছর আগে পিটিয়ে হত্যা করা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এই নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আবরারের বাবা মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ, ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ এবং মামা মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাক্ষাতে আবরারের পরিবার চব্বিশের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের আগে দলীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়ে নিহতদের নামের তালিকা তৈরির পাশাপাশি সেসব ঘটনার বিচার ও তদন্তের দাবি জানান। আবরার হত্যা মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতেও সরকারের উদ্যোগ চান তারা।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের এক কক্ষে ছাত্রলীগ নেতাদের পিটুনিতে নিহত হন আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদ। এতে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট এবং ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয় সেখানে।
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর এ মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। পরে হাই কোর্টেও ওই সাজা বহাল থাকে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামি জেল থেকে পালিয়ে গেছেন, আর তিনজন শুরু থেকেই পলাতক।
সাক্ষাতে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, “দেশের স্বার্থে কথা বলার কারণে আবরারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এখনো তার মা সন্তান হারানোর যন্ত্রণায় কাঁদেন। যেন আর কোনো মা এই কষ্ট না পায়।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে হত্যা জাতিকে স্তব্ধ করেছিল। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হবেই। পাশাপাশি চব্বিশের জুলাইয়ের আগে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের সন্ত্রাসীদের হাতে নিহতদের তালিকা করে প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “তৎকালীন সরকারের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো নিয়েও তদন্ত চলছে। সরকার ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে।”
আবরারের বাবা কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চান। তিনি বলেন, সেতু না থাকায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন।
আবরারের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আরও শিক্ষার্থী-বান্ধব করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ল্যাব, সরঞ্জাম ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ঘাটতির কারণে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে রয়েছে।”
বুয়েটের তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী র্যাগিং বন্ধে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তিনি বলেন, “বুয়েটে নিপীড়নের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। আগের ঘটনাগুলোরও তদন্ত ও বিচার হওয়া প্রয়োজন।”