আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকার ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি এবং বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় জোরদারে কাজ শুরু করেছে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনকেন্দ্রিক বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি মাঠে মোতায়েন থাকবে ৬০ হাজার সেনাসদস্য।
আজ সোমবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, প্রশাসনিক রদবদল, ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ ও মিডিয়া কাঠামো গঠনের বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিং করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, নির্বাচনের সময় পুলিশ স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। এই বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বৈঠকে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তার বরাতে প্রেস সচিব বলেন, “সেপ্টেম্বর-অক্টোবর-নভেম্বর মাসে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনের বিষয়ে ট্রেনিং দেওয়া হবে।”
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্বাচনের সময় ৬০ হাজার সেনাসদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এরই মধ্যে তারা মাঠপর্যায়ে সক্রিয় এবং বিচারিক ক্ষমতাও রয়েছে।
ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানো প্রতিরোধে সরকার ‘ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টার’ গঠনের চিন্তাভাবনা করছে। শফিকুল আলম বলেন, “এই সেন্টারটি খুব দ্রুত মিস ইনফরমেশন শনাক্ত ও প্রতিহত করবে এবং সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেবে। এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ইতিবাচক কর্মকাণ্ড প্রচারেও সহায়ক হবে।”
পুলিশ বাহিনীর একটি সেন্ট্রাল কমান্ড স্ট্রাকচারের আওতায় একটি মিডিয়া সেন্টার প্রতিষ্ঠার কথাও বৈঠকে উঠে আসে। প্রতিদিন নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে দ্রুত তথ্য সরবরাহের জন্য এই মিডিয়া উইং কাজ করবে।
গোপালগঞ্জসহ কিছু এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টি হলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আগাম তথ্য দিতে না পারায় সমালোচনার মুখে পড়ে। এ প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, “সরকার ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ব্যর্থতা এড়ানো যায়।” গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আগেভাগে তথ্য সংগ্রহ এবং কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনপূর্ব প্রশাসনিক রদবদল নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, “সার্বিকভাবে নয়, শুধুমাত্র যেখানে প্রয়োজন, সেখানে রদবদল করা হবে।”
এছাড়া ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত সম্ভাব্য অস্থিরতাপূর্ণ এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব এলাকার তথ্য কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র) খোদা বখস চৌধুরী, মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসও লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
দিনের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ড, ঐকমত্য কমিশনের রাজনৈতিক সংলাপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত সম্পূরক শুল্ক ইস্যুতে আলোচনা হয়।
প্রেস সচিব জানান, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, টেরোরিস্টদের ব্যাপারে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি আছে এবং নির্বাচনী নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে।”
এদিন রাতেই শুল্ক ইস্যুতে আলোচনা করতে বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধি দল ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেবে।
প্রেস সচিব আশা প্রকাশ করেন, সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং সিভিল প্রশাসনের মধ্যে শক্তিশালী সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশ একটি নিরাপদ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।