জুলাই পদযাত্রা শেষে ঢাকায় ফিরল এনসিপি

দেশজুড়ে মাসব্যাপী অভিযাত্রা শেষে ঢাকায় ফিরে এসেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘জুলাই পদযাত্রা’।
বুধবার মধ্যরাতে পদযাত্রার গাড়িগুলো বাংলামোটরে দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছালে বৃষ্টিভেজা রাতেও মহানগরের নেতাকর্মীরা ফুল ছিটিয়ে নেতাদের বরণ করে নেন।

৩০ জুন মধ্যরাতে বাংলামোটর থেকেই এই কর্মসূচি শুরু করে এনসিপি। উদ্দেশ্য ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ-আহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, অভ্যুত্থানের নেতাদের ভাবনার শোনা, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও নতুন সংবিধানের লক্ষ্যে গণপরিষদ নির্বাচনের পক্ষে জনমত গঠন।

পদযাত্রার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে।
রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ অন্তত ৬০টি জেলা পরিভ্রমণ শেষে বুধবার রাতে সাভারের বাইপাইলে পথসভা দিয়ে শেষ হয় কর্মসূচি।

কর্মসূচি চলাকালে গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে এবং কক্সবাজারে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ছাড়া বাকি জেলাগুলোতে শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম হয়।

ঢাকায় ফিরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আবু সাঈদের কবর জিয়ারত দিয়ে শুরু করেছিলাম, রক্তস্নাত সাভার দিয়ে শেষ করলাম। এই পদযাত্রা আমাদের রাজনীতি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই অভিজ্ঞতা ও জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে ক্ষমতা জনতার কাছে নিতে আমরা সচেষ্ট ছিলাম। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এনসিপি কাজ করে যাবে।”

পরিপক্বতার ঘাটতি?

পদযাত্রায় নেতৃত্বদানকারী অভ্যুত্থানকালীন নেতাদের দেখে আবেগাপ্লুত হয়েছেন শহীদ পরিবাররা। তরুণদের নিরলস পরিশ্রমও নজর কেড়েছে।
পথে গাড়ি বা পায়ে হেঁটে পথ পাড়ি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা, কখনও দেখা গেছে ঝিলের পানিতে নেমে গোসল করতেও। তবে ‘প্রটোকল’ আর নিরাপত্তার কারণে জনদুর্ভোগ এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, “সারা দেশে গিয়ে রাজনীতি তুলে ধরার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তবে আরও পরিপক্বতা দেখানো প্রয়োজন ছিল। গোপালগঞ্জের ঘটনা অনভিপ্রেত।”

তিনি বলেন, “সরকারি সুবিধার বাইরে এসে নিজেদের সক্ষমতায় পথ চলতে হবে। না হলে জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। ব্যক্তিগত আক্রমণ বন্ধ না করলে ইমেজ সংকটে পড়বে এনসিপি।”

বাদ পড়েছে চারটি জেলা

২১ জুলাই খাগড়াছড়ি থেকে ফেনীর দিকে যাওয়ার সময় ঢাকার মাইলস্টোন কলেজ দুর্ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী হতাহত হলে ফেনীর কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করা হয়। এরপর রাষ্ট্রীয় শোকের অংশ হিসেবে বাতিল হয় নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের কর্মসূচি।
ঢাকায় ফিরে শীর্ষ নেতারা দুর্ঘটনাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেন। পরে কুমিল্লার কর্মসূচি শোক মিছিলে রূপ নেয়।

১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে পদযাত্রা ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে উত্তেজনা তৈরি হয়। পদযাত্রার নাম পরিবর্তন করে দেওয়া হয় ‘মার্চ ফর গোপালগঞ্জ’।
সেদিন শহরে সমাবেশের পর ফেরার পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে পাঁচজন নিহত হন। একই সঙ্গে মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের কর্মসূচিও বাতিল হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “গোপালগঞ্জের হামলা ও মাইলস্টোন ট্রাজেডির কারণে কয়েকটি জেলা বাদ পড়েছে। পরবর্তীতে সেখানে সমাবেশ হবে। ৬৪টি জেলায় পদার্পণের লক্ষ্যে কর্মসূচি চলবে।”

তিনি আরও বলেন, “পথসভা ও পদযাত্রায় জনদুর্ভোগের জন্য দুঃখিত। জনগণের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক অটুট থাকবে, এবং তাদের জন্য রাজনীতি অব্যাহত থাকবে।”