ঢাকায় কাছাকাছি তিনটি স্থানে একযোগে সমাবেশ ও অনুষ্ঠান চলার কারণে শাহবাগ কেন্দ্রিক যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে আশপাশের সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু এলাকায় যানজটও দেখা গেছে, বিকেলের দিকে এ যানজট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শাহবাগ মোড়ে ছাত্রদলের আয়োজনে ‘ছাত্র সমাবেশ’ ঘিরে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর জমায়েত হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা বাসে ও পায়ে হেঁটে শাহবাগে পৌঁছান দুপুরের আগেই।
একইদিন বিকাল ৩টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের’ দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জনসমাবেশ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজিত চার দিনের ‘জুলাই জাগরণ’ অনুষ্ঠান।
এই কর্মসূচিগুলোর কারণে শাহবাগ মোড়ের চারপাশে যান চলাচল বন্ধ করে ডাইভারশন দেওয়া হয়েছে বলে জানান ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই ডাইভারশন কার্যকর করা হয়েছে। আশপাশের সড়কে যান চললেও চাপ বেড়েছে। এতগুলো বড় কর্মসূচি একসঙ্গে হলে কিছুটা প্রভাব পড়েই।”
যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
পল্টন মোড় থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবগামী সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় গুলিস্তান থেকে কাকরাইলমুখী সড়কে যানজট তৈরি হয়েছে। পল্টনে দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবল সারোয়ার জানান, গুলিস্তান-পল্টন থেকে শাহবাগ-সায়েন্সল্যাব ও বাংলামোটরগামী সব যানবাহন কাকরাইল হয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে চাপ বাড়ছে এবং অফিস শেষের পর এই চাপ আরও বাড়বে।
সমাবেশে আগতদের গাড়িগুলো মৎস্যভবন, কাঁটাবন, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এলাকা ঘিরে সড়কে অবস্থান করায় যানজট আরও বেড়েছে। দুপুর নাগাদ বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, মৌচাক-মগবাজার এবং কলাবাগান-ধানমন্ডি এলাকাতেও জটলা দেখা গেছে।
পল্টন থেকে বাড্ডা যেতে বাসের অপেক্ষায় থাকা রায়হান বলেন, “বাস আসছে ঠিকই, কিন্তু প্রচণ্ড ভিড়। উঠতে পারলেও দাড়িয়েই যেতে হবে। বাস চলছে না প্রায়।”
সাভার পরিবহনের এক চালকের সহকারী শাকিল বলেন, “গুলিস্তান থেকে অনেক কষ্টে এখানে আসছি। সামনে কী অবস্থা—কখন পৌঁছাব, ঠিক নেই।”
তবে ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার তানিয়া সুলতানা জানান, আগেই গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল বলে অপ্রয়োজনীয় চলাচল কমেছে। এখনো বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়নি, কোথাও জটলা হলে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে।
ডাইভারশন পয়েন্ট ও বিকল্প পথ
- হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়: সোনারগাঁও সিগন্যাল/বাংলামোটর থেকে উত্তর দিক থেকে আসা যানবাহন হেয়ার রোড/মিন্টু রোড হয়ে চলাচল করবে।
- কাটাবন মোড়: সায়েন্সল্যাব থেকে আসা যানবাহন ডানে নীলক্ষেত/পলাশী অথবা বামে হাতিরপুল হয়ে বাংলামোটর লিংক রোডে যাবে।
- মৎস্য ভবন মোড়: হাইকোর্ট/কদম ফোয়ারা থেকে আসা যানবাহন হেয়ার রোড/মগবাজার রোড হয়ে যাবে।
- কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং: উত্তর দিক থেকে আসা যানবাহন হাইকোর্ট হয়ে গুলিস্তান/ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়গামী হবে।
- টিএসসি/রাজু ভাস্কর্য: নীলক্ষেত বা দোয়েল চত্বর থেকে আসা যানবাহন দোয়েল চত্বর/নীলক্ষেত হয়ে চলাচল করবে।
পুলিশ শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়ক এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশপথ যথাসম্ভব পরিহার করার অনুরোধ জানিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ঢাকাবাসী, বিশেষ করে এইচএসসি ও বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বের হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে গণবিজ্ঞপ্তিতে।