রাজনৈতিক দলগুলো যে সংস্কারের বিষয়ে একমত হয়েছে, সেগুলো অবশ্যই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং ভোটের আগে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে বাধ্য করা হবে।
রোববার বিকেলে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ‘জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংস্কারের বিরোধীরা যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায় উল্লেখ করে তাহের বলেন, “আমরা যারা পিআর চাই, যারা সংস্কার চাই, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই—সবাই মাঠে আবার ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি পূরণে সরকারকে বাধ্য করব।”
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে একটি পথ বের করা প্রয়োজন। সংস্কার, পিআর ও নির্বাচন কবে হবে—এ নিয়ে সরকার একটি প্যাকেজ গণভোট দিতে পারে। জনগণ যা বলবে, জামায়াত তা মেনে নেবে।
তাহের বলেন, “যাদের আস্থায় রেখে জাতি ক্ষমতায় বসিয়েছিল, আশা করেছিলাম তারা একটি নতুন যাত্রা শুরু করবে। কিন্তু এখন দেখি ক্ষমতায় বসে তারাও রাবণে পরিণত হয়েছে। এটা কি তাদের দুর্ভাগ্য, না বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য—তা বিশ্লেষণের প্রয়োজন।”
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার দাবি করেন, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াত জাতির স্বার্থে অনেক বিষয়ে ‘স্যাক্রিফাইস’ করেছে। তিনি বিএনপিকেও জাতীয় স্বার্থে একইভাবে ছাড় দেওয়ার আহ্বান জানান। সব সংস্কারের আইনি ভিত্তি না দিয়ে নির্বাচন হলে দেশের ভাগ্যে মহাবিপর্যয় অপেক্ষা করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর মতে, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের আইনি কাঠামো ছাড়া নির্বাচন হলে দেশে আরেকজন হাসিনার জন্ম হবে।
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন জুলাই ঘোষণা ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি। রাষ্ট্রপতির ঘোষণাপত্র বা গণভোট—এ দুটি মাধ্যমের যেকোনো একটি এর আইনি ভিত্তি প্রদানের গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হতে পারে।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, নির্বাচিত সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে—অন্তর্বর্তী সরকারের এমন বক্তব্যে তারা আস্থা রাখেন না। তিনি গণভোটের সময়সাপেক্ষতার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতির ঘোষণার মাধ্যমে জুলাই সনদ সংশোধন করে এর আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, ভোট ডাকাতি ও মনোনয়ন–বাণিজ্য বন্ধ করতে পারে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন। জনগণ এটি চায় কি না, সে বিষয়ে গণভোট আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন মন্তব্য করেন, জুলাই ঘোষণাপত্র অপরিপক্ব ও আশাব্যঞ্জক হয়নি। তিনি বলেন, “শুধু মুখের কথায় আস্থা রাখা যায় না।” নতুন সংবিধানের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাসুম, রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির সেলিম উদ্দীন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাসান নাসির, আমীন আহমদ আফসারী, জিয়াউল হাসান, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মাওলানা আবু তাহের জিহাদী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাত্তার প্রমুখ।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও রেজাউল করিম।