প্রস্তাবিত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “যেভাবে জুলাই সনদের অঙ্গীকার খসড়ার মধ্যে বলা হয়েছে, তাতে করে এ বিষয়গুলোকে পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা খেয়াল করা যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা যে সংস্কার প্রস্তাবনার ব্যাপারে একমত হয়েছি, সেগুলো টেকসইভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। যেসব বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি এবং কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই।”
শনিবার ঢাকার বাংলামোটরে এনসিপির কার্যালয়ে জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, “একটা সংবিধানের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো তো আমূল পরিবর্তন হবে। সেই পরিবর্তনগুলো টেকসই করতে হলে নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে। নতুন সংবিধান—যে সংবিধানকে তার ভিত্তিমূল নিয়ে হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্ন তোলা সম্ভব হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “মূল সংবিধান ব্যতিরেকে যত সংশোধনী ও প্রস্তাবনা আনা হোক না কেন, সেগুলো হাই কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা যায়, সুপ্রিম কোর্টে ব্যাখ্যা চাওয়া যায়। সুপ্রিম কোর্ট সে ব্যাখ্যা দিতে পারে। এ সম্ভাবনার জায়গাটা এখনো রয়ে গেছে।”
একমত হওয়া বিষয়গুলো গ্রহণের দলিলের নাম ‘জুলাই সনদ’ হওয়ার কথা ছিল উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, “কিন্তু আমরা খেয়াল করছি, কমিশন খসড়া উপস্থাপন করার সময় জুলাই সনদকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আমরা মনে করি, অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে দেশের মানুষ যে নতুন রাষ্ট্র কাঠামোর কথা ভেবেছে, সেই ডকুমেন্টের শুরুর নাম জুলাই সনদ হিসেবেই থাকা উচিত। জুলাই জাতীয় সনদ কথাটি মানুষের জুলাই আন্দোলনের অবদানকে দুর্বলভাবে উপস্থাপন করেছে।”
তিনি বলেন, জুলাই সনদের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হলে গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন এবং একমত হওয়া বিষয়গুলোকে গাইডেন্স প্রিন্সিপাল হিসেবে গ্রহণ করে নতুন সংবিধানে যুক্ত করতে হবে।
“আমরা ঐক্যবদ্ধ কমিশনে যে নীতিগত বিষয়গুলোতে একমত হয়েছি, সেগুলোর টেক্সট কেমন হবে তা আলোচনায় আসেনি। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে আসা জনপ্রতিনিধিরাই সে টেক্সট তৈরি করবেন।”
জুলাই সনদ অনুযায়ী সংবিধানের ৬০ থেকে ৭০টি অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আসবে বলে মন্তব্য করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, “এত বৃহৎ পরিবর্তন মানে সংবিধান পুনর্লিখনের সমান। যখন সংবিধানকে নতুন করে লিখতেই হচ্ছে, সেখানে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নে বাধা দেখানো আমাদের কাছে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে।”