আরপিও সংশোধনীতে নির্বাচন জটিল হবে: বাসদ

জামানত আড়াইগুণ বাড়ানোসহ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আনা বেশ কয়েকটি সংশোধনী নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ‘জটিল করে তুলবে’ বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ।

সংসদকে ‘কোটিপতিদের ক্লাবে পরিণত করার চক্রান্ত’ রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ এ অবস্থান তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে জামানত বাড়ানোসহ অনেকগুলো প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে নির্বাচনকে জটিল ও সাধারণ মানুষের প্রার্থী হওয়া অসম্ভব করে তুলবে।”

জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা এবং নির্বাচনী ব্যয়সীমা ভোটার প্রতি ১০ টাকা হারে ন্যূনতম ৫০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৭৮ লাখ করার প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, “ধনীদের জন্য সহজ এবং সাধারণ মানুষের জন্য প্রার্থী হওয়া কঠিন করে তোলা হয়েছে। এর ফলে বাস্তবে সংসদ পূর্বের মতোই কোটিপতিদের ক্লাবে পরিণত হবে। যা ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি।”

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট আয়োজনের লক্ষ্যে ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে ভোটের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনি আইন সংস্কার নিয়ে মাসখানেক ধরে দফায় দফায় পর্যালোচনা শেষে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করে কমিশন। মঙ্গলবার তা সরকারের অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর সরকারের অনুমোদনের জন্য তা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উত্থাপন হবে। এরপর রাষ্ট্রপতি সংশোধনীর অধ্যাদেশ জারি করবেন। রোডম্যাপ অনুযায়ী এ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করারও পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। যদিও আরপিও চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া এরই মধ্যে চালানো হয়েছে, তবে দলগুলোর পরামর্শ পাওয়া গেলে তা বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে ইসি।

এমন প্রেক্ষাপটে আরপিও সংশোধনী নিয়ে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “‘না’ ভোটের বিধান চালু করা আমাদের দীর্ঘদিনের অন্যতম দাবি ছিল। কিন্তু শুধুমাত্র একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে ‘না ভোট’ চালু করা ভোটারদের মত প্রকাশের পথকে রুদ্ধ করবে।”

অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান বাতিল করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এর ফলে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া কত সহজ করা যায়, সেই পথ বের করাই কমিশনের কাজ। অথচ তা না করে কমিশন অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিধান বাতিলের প্রস্তাব করেছে, যা মোটেই কাম্য নয়।”

এছাড়া সশস্ত্র বাহিনীকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “এর ফলে দমন-পীড়নের মাত্রা বাড়বে এবং ক্ষমতার অপপ্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে।”

তার মতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ থাকলে বা ফেরারি আসামিদের নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণার বিধানও নতুন জটিলতা তৈরি করবে। তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত যতক্ষণ পর্যন্ত অভিযোগ প্রমাণিত না হচ্ছে, ততক্ষণ অপরাধী সাব্যস্ত না করার নীতিরও পরিপন্থি। এর ফলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার প্রবণতাও বাড়বে।”

বিবৃতিতে তিনি দাবি করেন, সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে জামানত না বাড়িয়ে বরং ৫ হাজার টাকা করা এবং নির্বাচনী ব্যয়সীমা কমিয়ে ৩ লাখ টাকা করা জরুরি। পাশাপাশি শুধু একক নয়, একাধিক প্রার্থীর ক্ষেত্রেও ‘না ভোটের’ বিধান চালু করা, অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিধান বহাল রাখা, সশস্ত্র বাহিনীকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা না দেওয়া এবং মামলা বা ফেরারি থাকলেই প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য ঘোষণার বিধান প্রবর্তন না করার দাবি জানিয়েছে দলটি।