ভাঙ্গায় অবরোধ তুলে নিলেন স্থানীয়রা, স্বাভাবিক হলো যান চলাচল

আড়াই ঘণ্টা পর ফরিদপুরের ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। এতে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল আবার শুরু হয়েছে।

সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে ভাঙ্গা গোলচত্বরে এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেন হাজারো মানুষ। এতে দুই মহাসড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের গেজেটে ফরিদপুরের দুটি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়। ফরিদপুর-৪ আসনের (ভাঙ্গা–সদরপুর–চরভদ্রাসন) ভাঙ্গা থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন বাদ দিয়ে ফরিদপুর-২ আসনের (নগরকান্দা ও সালথা) সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এ সিদ্ধান্তের পর থেকেই ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান অবরোধস্থলে গিয়ে জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং সমস্যার সমাধানের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় চাওয়া হয়েছে।

তবে উপস্থিত জনতা ইউএনওর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে অবরোধ অব্যাহত রাখেন। একপর্যায়ে ইউএনও ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে অন্ধকার নামার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হলে ধীরে ধীরে অবরোধকারীরা স্বেচ্ছায় মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় আবার সব পথে যান চলাচল শুরু হয়।

এর আগে সকাল সাড়ে আটটার দিকে ভাঙ্গার আলগী ইউনিয়নের সোয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রথম অবরোধ শুরু হয়। সকাল নয়টার মধ্যে হামিরদী ইউনিয়নের মনসুরাবাদ, মাধবপুর ও পুকুরিয়া এলাকায় শত শত মানুষ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন।

চার ঘণ্টা পর ইউএনও মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের অনুরোধে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিন দিনের সময়সীমা দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। আগামী সোমবারের মধ্যে ভাঙ্গার বিভাজন বন্ধ না হলে মঙ্গলবার থেকে লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। কিন্তু বিকেল চারটার দিকে আবার অবরোধ শুরু হলে দুই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিকেলের অবরোধে কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম ম সিদ্দিক। তিনি বলেন, “ভাঙ্গার এক ইঞ্চি মাটিও নগরকান্দার হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে না।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল চারটার দিকে হাজারো মানুষ ভাঙ্গা গোলচত্বরে বসে অবরোধ শুরু করেন। এ সময় ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কে দুটি ও ঢাকা–খুলনা মহাসড়কে চারটি টায়ারে আগুন ধরিয়ে অবরোধ করা হয়। বিক্ষোভকারীরা এ সময় স্লোগান দেন—“আমার মাটি আমার মা, ভাঙ্গা নগরকান্দায় যাবে না”, “জেগেছে রে জেগেছে, আলগীবাসী জেগেছে”, “রক্ত লাগলে রক্ত দিব, ভাঙ্গার মাটি ছাড়ব না”।

অবরোধের কারণে দুটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দূরপাল্লার বাস, মালবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন আটকা পড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

 

এদিকে বেলা সোয়া একটার দিকে ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কের পুখুরিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করেন বাংলাদেশ কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদপুর-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শহিদুল ইসলাম।

শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই ভাগ আমরা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেব না। প্রয়োজনে বিভাজন রোধে আমি ব্যক্তিগতভাবে আগামী রোববার কোর্টে যাব। আমাদের বক্তব্য ও অবস্থান স্পষ্ট। আমরা একতাবদ্ধ। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অনৈক্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমাদের এই আন্দোলন দলমত–নির্বিশেষে সবার।’