রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলার’ কবর ও দরবার শরিফে হামলার সময় নিহত রাসেল মোল্লার পরিবার ঘটনার বিচার দাবি করেছে।
রাসেলের বাবা আজাদ মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, “শুক্রবার দুপুরের পর সেখানে উত্তেজিত জনগণ আমার ছেলের মুখটা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে, পিঠে কুপিয়েছে। আমার ছেলের কী দোষ ছিল? কেন আমার ছেলেকে মারা হল। আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।”
গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের জটু মিস্ত্রিপাড়ার বাড়িতে বসে শনিবার তিনি এ দাবি জানান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, “আমার রাসেল ছোট থেকেই নুরাল পাগলের ভক্ত ছিল। ছোট থেকেই গোয়ালন্দ পাক দরবার শরিফে যাওয়া-আসা করত, দরবারকে ভালোবাসত। শুক্রবারও সে সেখানে গিয়েছিল।”
রাসেল মোল্লা (২৮) পেশায় কাভার্ড ভ্যানচালক ছিলেন।
নিজেকে ইমাম মাহাদি দাবি করা নুরুল হক সম্প্রতি মারা যাওয়ার পর মাটি থেকে কিছুটা উঁচু করে কবর তৈরি করে তাকে দাফন করা হয়। কবরটির আকৃতি কাবা শরিফের আদলে তৈরি করা হয়। এ নিয়ে তৌহিদী জনতার মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। স্থানীয় প্রশাসন দুপক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছিল।
কিন্তু শুক্রবার জুমার নামাজের পর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিভিন্ন স্থান থেকে তৌহিদী জনতা এসে শহীদ মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। পরে তারা নুরুল হকের বাড়ি ও দরবারের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দরবার শরিফ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
এ সময় হামলায় নুরুল হকের বেশ কিছু ভক্ত ও অনুসারী আহত হন। আহতদের কয়েকজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে রাসেল মোল্লা মারা যান।
শনিবার রাসেল মোল্লার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা সেখানে ভিড় করেছেন। পুরো বাড়িতে শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে। তখনও মরদেহ এসে পৌঁছায়নি। আজাদ মোল্লা বলেন, মামলার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেবেন।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এসআই সেলিম বাদী হয়ে অজ্ঞাত সাড়ে তিন হাজার লোকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। দরবারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, কবর থেকে লাশ উত্তোলন ও পুড়িয়ে ফেলা এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আরেকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।