বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, অতি শিগগিরই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। তবে তিনি সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ উল্লেখ করেননি।
রোববার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) মুক্তিযোদ্ধা হলে জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রচারণার অর্ধেক কাজ হবে প্রত্যাবর্তনের দিন
সালাহউদ্দিন বলেন, “সারাদেশে নির্বাচনি আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। অতি শিগগিরই আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমান বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করবেন। সেদিন বাংলাদেশের নির্বাচনের সমস্ত কিছু প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। আমি বলছি, নির্বাচন হয়ে যাবে। তবে আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে সেদিনই নির্বাচনের অর্ধেক কার্য সমাপ্ত করতে পারব। সেটা কী? সারা বাংলাদেশে আমাদের নির্বাচনি প্রচারণা হয়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “তার প্রত্যাবর্তন হবে একটি অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক ঘটনা।” এসময় মিলনায়তনে উপস্থিত নেতাকর্মীরা করতালি দিয়ে স্লোগান দেন— ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশ।’
এর আগে শনিবার দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনও তারেক রহমানের শিগগির দেশে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এর দুদিন আগে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকার ভ্রমণ বিষয়ক কাগজপত্র দিয়ে সহায়তা করবে। তবে ফেরার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ তারেক রহমানের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার পর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশে ফেরেননি। এ সময় নানা মামলা ও বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দেশে ফেরার পথ খুললেও তিনি আসেননি। লন্ডন থেকেই দলের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সব মামলায় খালাস পেয়েছেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে অবস্থান
সভায় সালাহউদ্দিন বলেন, “নির্বাচনের পথে যারাই কাঁটা বিছানোর চেষ্টা করবেন, বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন তাদের উদ্দেশে নসিহত হচ্ছে, আমরা এখন নির্বাচনে আবহাওয়ার মধ্যে আছি।”
সংবিধানের আর্টিকেল ১০৬ অনুযায়ী সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলী শপথ নিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করবেন, পরামর্শ দেবেন—কিন্তু সবারই উচিত গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারায় চিন্তা করা। এই জাতিকে অতি শিগগির একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
‘ফ্যাসিস্টদের রাজনীতির জায়গা নেই’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, ভালো রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে অপসংস্কৃতি ও ফ্যাসিস্ট রাজনীতিকে বিলুপ্ত করতে হবে। আমরা যদি ভালো আদর্শিক রাজনীতি উপস্থাপন করতে পারি, তাহলে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বিকল্প যদি ভালো থাকে, তাহলে অতীতের কোনো ফ্যাসিস্ট শক্তি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা পাবে না। আজকে দেখলাম আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ মিছিল কোথাও হচ্ছে—এক জায়গায় ‘জয়’, আরেক জায়গায় দেড় মাইল দূরে গিয়ে বলছে ‘বাংলা’। এটাই তাদের অবস্থা। সুতরাং সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক রাজনীতি আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
তিনি জানান, জনদুর্ভোগ এড়াতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপি র্যালি না করে নালা-নর্দমা পরিষ্কারের মতো জনবান্ধব কর্মসূচি দিয়েছে।
আরপিও সংশোধনী নিয়ে সমালোচনা
আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কিছু প্রস্তাব অমূলক মনে হয়েছে। যেমন—একাধিক দল মিলে জোট করলে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে বড় দলের প্রতীক নিতে হবে। এতে ছোট দলগুলো জোট করতে আগ্রহ হারাবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। “এভাবে অমূল সংস্কার আইন করলে পরে জটিলতা তৈরি হতে পারে,” বলেন সালাহউদ্দিন।
সংবিধান সংশোধনের বিষয়েও অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
সভায় জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের সভাপতি রমিজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালসহ কর আইনজীবীরা বক্তব্য রাখেন।