ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের পরদিন বুধবার ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিন দফা সিদ্ধান্ত বদলের পর ভোটের দিন মঙ্গলবার রাতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার এ সিদ্ধান্ত জানানো হলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, “বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।”
ভোটের কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর যুক্তিতে প্রতিরোধ পর্ষদসহ কয়েকটি প্যানেলের দাবির প্রেক্ষাপটে ৩০ আগস্ট এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৭ সেপ্টেম্বর (রোববার) থেকে ১০ সেপ্টেম্বর (বুধবার) পর্যন্ত চার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার কথা বলেছিল।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন অনেকে। লম্বা ছুটিতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে পারেন, এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়।
পরে ১ সেপ্টেম্বর আরেক বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৭ তারিখের ছুটি বাদ দেওয়া হয়। ওই দিন ডাকসু ভোট উপলক্ষে ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর (তিন দিন) ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার কথা বলা হয়।
সবশেষ গেল বুধবার নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে শুধু ভোটের দিন ৯ সেপ্টেম্বর ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার তথ্য দেন। সেবারও প্রার্থীদের ‘দাবির মুখে’ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, “রীতি অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসু নির্বাচনের জন্য একদিন বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের অনুরোধ বিবেচনা করেছিলাম এবং সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা ছুটি বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম, কর্তৃপক্ষ সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
“যেহেতু আপনারা জানেন, এবারকার নির্বাচনটা একটা বিশেষ ব্যবস্থায় হচ্ছে, এটা হলে হচ্ছে না, আমাদের অ্যাকাডেমিক এরিয়াতে হচ্ছে। এখন নির্বাচনের এ মুহূর্তে এসে প্রার্থীদের অনেকেরই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আবার শুধুমাত্র ৯ তারিখ বন্ধ রেখে, আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলাম। প্রশাসন সেই অনুরোধটা রেখেছে। সে অনুযায়ী একটা সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রচার হচ্ছে।”
মঙ্গলবার দিনভর ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পর এখন চলছে গণনা। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের আটটি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ করা হয়। এ সময় আচরণ বিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আসে চারটি প্যানেলের তরফে।
ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের দুই প্রার্থীর ব্যালটে আগে থেকে টিক দিয়ে রাখার অভিযোগে প্রশাসনের বিরুদ্ধে টিএসসিতে বিক্ষোভও করেছে ছাত্রদল। রাতে ভোট গণনা চলাকালে খালি ব্যালটবক্স ভরে ফেলার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সামনে ছাত্রদলের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
ভোট গণনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলোতে লোকজনের জমায়েত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ব্যক্তিপর্যায়ে অবস্থানকারীদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া না গেলেও তারা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বলে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন ডাকসুর ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা।
ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের অভিযোগ, নীলক্ষেত, শাহবাগ, চানখারপুলে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা ‘সংঘবদ্ধভাবে অবস্থান’ নিয়েছেন। অপরদিকে শিবির প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী এস এম ফরহাদের অভিযোগ, নয়টি পয়েন্টে যুবদল এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা পাহারা দিচ্ছেন।
ফল ঘিরে প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসজুড়ে উত্তাপের মধ্যে ভোটের পরদিনও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার কথা জানাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।