রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কর্মসূচি

তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণজমায়েত ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের আয়োজন করেছে শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা চত্বরে ‘তিস্তা বাঁচাও আন্দোলন’-এর অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয় এ কর্মসূচি। এতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ভারত শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানি আটকে রাখে এবং বর্ষা এলে হঠাৎ বাঁধের গেট খুলে দেয়, ফলে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়। তারা ভারতের এই নীতির তীব্র সমালোচনা করেন এবং পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতের আহ্বান জানান।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ভারতের এই পানি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের কৃষি, রাজনীতি ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। শিক্ষার্থীরা দাবি জানান—বাংলাদেশের নদীর স্বার্থ রক্ষায় এ পারে নিজস্ব বাঁধ নির্মাণ করতে হবে এবং ভারতের সঙ্গে অন্যায্য সব পানি চুক্তি বাতিল করতে হবে।

শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি শেখ নূর উদ্দিন আবীর কর্মসূচিতে বলেন, “মনে রাখবেন, এই বাংলাদেশ এখন ‘জেন-জি’ প্রজন্মের। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে বলছি—আমাদের ন্যায্য হিস্যা দিন। আমরা বন্ধুত্ব চাই, প্রভুত্ব নয়। বড় ভাইয়ের মতো আচরণ করলে আমরা কিন্তু দেখে নেব।”

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, “ভারত বুঝে গেছে, কৃষিতে আঘাত হানতে পারলে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। সেই উদ্দেশ্যেই তারা তিস্তা বাঁধ নির্মাণ করেছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্বপ্না আক্তার বলেন, “ভারত কৌশলে খরা মৌসুমে পানি বন্ধ রাখে, আবার বর্ষায় বাঁধ খুলে দিয়ে আমাদের এলাকা ডুবিয়ে দেয়। দুই মৌসুমেই তারা আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”

তিনি আরও বলেন, “২০১১ সালের তিস্তা চুক্তির সময় আমাদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রতি অতিমাত্রায় অনুগত ছিলেন। সেই সময় দেশের স্বার্থ রক্ষা করা হয়নি।”

স্বপ্না আরও যোগ করেন, “আমরা যেমন ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য, আর ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছি, তেমনি এখন আমাদের ন্যায্য পানির দাবিতেও ঐক্যবদ্ধ হব। আমাদের একটাই দাবি—তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা চাই।”

কর্মসূচির শেষে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ব্যান্ড ‘দাবি আমার একটাই, তিস্তা নদীর পানি চাই’ শিরোনামে প্রতিবাদী গান পরিবেশন করে। সংগীতের সুরে সুরে শিক্ষার্থীরা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে কণ্ঠ মেলান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।