প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে দলটি আপত্তিকৃত উপদেষ্টাদের নাম প্রকাশ করেনি।
বুধবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, “যারা উপদেষ্টা, তাদের ব্যাপারে বলেছি, সবার ব্যাপারে নয়। আমরা বলেছি, কিছু কিছু লোক আপনাকে বিভ্রান্ত করে। আপনার প্রতি আমাদের আস্থা আছে, কিন্তু আপনার কিছু লোক আপনাকে বিভ্রান্ত করছে এবং তারা কোনো একটি দলের পক্ষ নিয়ে কাজ করছে বলে আমরা মনে করি। তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার।”
এর এক দিন আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপিও কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। নাম উল্লেখ না করে দলটি প্রধান উপদেষ্টাকে ‘বিতর্কিত উপদেষ্টা’দের বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।
বৈঠকে কোনো উপদেষ্টার অপসারণ দাবি করেছেন কি না—এমন প্রশ্নে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, “আমরা এখনই অপসারণ চাইছি না, কেবল দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সময় দিচ্ছি, আপনাকেও শুনতে দিচ্ছি। এরপর যদি ব্যবস্থা না হয়, তখন আমরা যা করার প্রয়োজন, তা বিবেচনা করব।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে এখনো সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলছে। আমরা রায়ের অপেক্ষায় আছি। যদি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কোনো ব্যত্যয় না ঘটে, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা আশা করছি।”
জামায়াতের দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন—এই প্রশ্নে তিনি জানান, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি এসব বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করছেন এবং যা করণীয়, তা তিনি করবেন, ইনশা আল্লাহ।”
বৈঠকে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, নভেম্বরের শেষে সম্ভাব্য গণভোট, এবং জুলাই সনদ কার্যকরের জন্য ‘এক্সট্রা কনস্টিটিউশনাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে জানান আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। চার সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন তিনি।
জুলাই সনদে স্বাক্ষরের জন্য জামায়াতকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে তাহের বলেন, “আমরা জুলাই সনদের বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তিনি একমত হয়েছেন যে এটি বাস্তবায়ন না হলে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। তিনি জানিয়েছেন, যথাযথ উদ্যোগ নেবেন।”
জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়—জুলাই সনদকে একটি ‘আদেশের মাধ্যমে’ সাংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে। তাহের বলেন, “এটি সংবিধান নয়, বরং এক্সট্রা কনস্টিটিউশনাল অ্যারেঞ্জমেন্ট। সংকটকালে সরকার এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার রাখে। প্রধান উপদেষ্টাও এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে একটি আদেশের মাধ্যমেই এটি কার্যকর হতে পারে।”
অধ্যাদেশ জারির প্রস্তাব নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করে জামায়াত। তাহের বলেন, “অধ্যাদেশ দুর্বল, এতে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়ার মতো ক্ষমতা নেই। কিন্তু একটি আদেশ সাংবিধানিক পরিবর্তনের সমান ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব রাখে। আমাদের বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং ঐকমত্য কমিশনের বিশেষজ্ঞরাও পরামর্শ দিয়েছেন—এটি আদেশের মাধ্যমেই বৈধতা দিতে হবে। এরপর সেই আদেশের ওপর গণভোট হবে। আমরা স্পষ্টভাবে এই প্রস্তাব দিয়েছি এবং মনে করি প্রধান উপদেষ্টা এতে রাজি হয়েছেন।”