বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ: আইএলওর তিনটি কনভেনশনে সই করল অন্তর্বর্তী সরকার

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কনভেনশনে সই করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন কনভেনশনগুলোতে স্বাক্ষর করেন।

স্বাক্ষরিত কনভেনশনগুলো হলো—
১️⃣ পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক ১৫৫ নম্বর কনভেনশন,
২️⃣ কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা মান উন্নয়নে প্রচারণামূলক কাঠামো সম্পর্কিত ১৮৭ নম্বর কনভেনশন, এবং
৩️⃣ কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি প্রতিরোধ বিষয়ক ১৯০ নম্বর কনভেনশন।

আইএলও ২০২২ সালে ১৫৫ ও ১৮৭ নম্বর কনভেনশনকে মৌলিক কনভেনশন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কনভেনশন তিনটির অনুসমর্থন শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ। এর মাধ্যমে শ্রম খাতের সব অংশীজন আন্তর্জাতিক শ্রমমান অনুসরণে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।

এই সইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে আইএলওর সব ১০টি মৌলিক কনভেনশনে অনুসমর্থন জানাল।

‘রানা প্লাজার পর থেকে আমাদের প্রতিশ্রুতি আজ বাস্তব রূপ পেল’

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর তৎকালীন সরকার অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তার বেশিরভাগই বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি— ‘হচ্ছে, হবে’ নয়, এবার করেই দেখাব।”

তিনি আরও বলেন, “দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শ্রম অধিকারের বিষয়টি ছিল আমার অগ্রাধিকারে। একের পর এক বৈঠক করেছি, সবাইকে বলেছি— এটি করতে হবে, কারণ এতে সবারই উপকার। কেউ কেউ বলেছিল জেনেভা বৈঠকে যেতে হবে, তখন আমি খুঁজে দেখলাম কেন অতীতে কেউ যায়নি।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা দীর্ঘ যাত্রার পর গন্তব্যে পৌঁছেছি। তবে এটি শুধু শুরু, কাগজে সই করলেই কাজ শেষ নয়— এখন বাস্তবায়নই মূল চ্যালেঞ্জ। কনভেনশনে কী আছে, কী অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা সবার জানাতে হবে।”

রানা প্লাজার শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা নিজেদের জীবন দিয়ে আমাদের যে দায়িত্ব দিয়ে গেছে, আমরা আজ সেই দায়িত্ব পালনের পথে এক ধাপ এগোলাম। আমি নিজেকে ওয়াদা করেছিলাম— এই কাজটি করবই। আজ তা করতে পেরে আনন্দিত।”

শ্রম উপদেষ্টা ও আইএলও প্রতিনিধিদের প্রতিক্রিয়া

শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আজকের দিনটি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক। এটি অর্জন করতে গিয়ে আমরা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলাম, তবে সবার পরিশ্রম ও প্রধান উপদেষ্টার সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনার কারণে এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে।”

প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “এই যাত্রা সহজ ছিল না, তবে আনন্দদায়ক। জেনেভা কনভেশনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা ছিল অনন্য।”

আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স টুনোন বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “কনভেনশনগুলো বাস্তবায়নে আইএলও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি শ্রম আইন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নেও সহায়তা দেওয়া হবে।”

তিনি আরও প্রস্তাব করেন, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেওয়া সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি জাতীয় শ্রম সনদ বা লেবার চার্টার গঠন করা যেতে পারে।

কনভেনশনে সই অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়াসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।