গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ‘বিপর্যয়ের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছে: ডব্লিউএইচও

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস সতর্ক করেছেন, গাজার স্বাস্থ্য খাত এমন এক সংকটের মধ্যে রয়েছে যা আগামী কয়েক প্রজন্ম ধরে প্রভাব ফেলতে পারে।

তিনি বলেন, গাজার মানুষের নানান চাহিদা পূরণের জন্য ত্রাণ সহায়তা দ্রুত এবং বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ১০ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ত্রাণ প্রবেশে ছাড় দেওয়া হলেও তা স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য পর্যাপ্ত নয়।

গাজার মানুষকে দুর্ভিক্ষ, ভয়াবহ আঘাত এবং ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার ধ্বংসের ফলে রোগের বিস্তার ঘটছে। মহাপরিচালক বলেন, “মানবিক সাহায্য প্রবেশ সীমিত থাকায় সেখানে বিপজ্জনক এবং প্রাণঘাতী পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্ষুধা ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মিলন এই সংকটকে দীর্ঘমেয়াদে প্রজন্মান্তরীয় করে তুলেছে।”

ডব্লিউএইচও প্রধান ত্রাণ সাহায্যকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইসরায়েলকে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও শর্ত না আরোপ করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, “সব জীবিত জিম্মি ফেরত এসেছে এবং মৃতদের মরদেহ হস্তান্তর হয়েছে, এর পরও ত্রাণে শর্ত আরোপের যৌক্তিকতা নেই।”

ইসরায়েল ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় দুই সেনা নিহত হওয়ার পর সাময়িকভাবে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করেছিল, তবে আন্তর্জাতিক চাপের পর তা পুনরায় চালু হয়েছে। বর্তমানে কেবল দুটি প্রবেশপথ—কেরেম শালোম ও কিসুফিম—খোলা আছে। গেব্রিয়াসুস জানিয়েছেন, “প্রয়োজনীয় সাহায্য পৌঁছাতে সব সীমান্তপথ খুলে দিতে হবে। বর্তমানে গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ ট্রাক প্রবেশ করছে, যেখানে বাস্তব প্রয়োজন অন্তত ৬০০ ট্রাক।”

চিকিৎসা সরঞ্জাম পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসই ইসরায়েল সীমান্তে আটকে রয়েছে। সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে এমন যুক্তিতে এগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, “অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরির জন্য তাঁবু ও খুঁটির প্রয়োজন, কিন্তু খুঁটি ছাড়া তাঁবু দাঁড়াবে কীভাবে?”

হাজার হাজার ফিলিস্তিনি চিকিৎসার জন্য সাপ্তাহিক ফ্লাইটের অপেক্ষায় আছেন, তবে গত দুই সপ্তাহে কোনও ফ্লাইট হয়নি। ইতিমধ্যে ৭০০ জন মারা গেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, যেহেতু তারা গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছে, চুক্তি মানা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব। যদিও যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে আরও বেশি সাহায্য প্রবেশের কথা বলা হয়েছিল, বাস্তবে তা প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম। ১০ অক্টোবর থেকে ৬ হাজার ৭০০ টনের বেশি খাদ্য গাজায় প্রবেশ করেছে, কিন্তু দৈনিক ২ হাজার টনের লক্ষ্য পূরণ হয়নি।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজা পুনর্গঠনে খরচ হবে প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার, যার অন্তত ১০ শতাংশ প্রয়োজন স্বাস্থ্য খাত পুনর্গঠনের জন্য।

গেব্রিয়াসুস বলেন, “আমরা বহুবার বলেছি, শান্তিই সবচেয়ে বড় ওষুধ। তবে যুদ্ধবিরতি এখনও ভঙ্গুর। চুক্তির পরও কয়েকবার ভেঙে গেছে এবং মানুষ মারা গেছে। যারা যুদ্ধবিরতির খবর শুনে আনন্দিত হয়েছিল, তাদের অনেকেই বেঁচে থাকতে পারেনি।”