৩৩ বছরের অপেক্ষার অবসান: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন

দীর্ঘ ৩৩ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংদের ভোট হতে যাচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২১টি ভোটকেন্দ্রে প্রায় ১১ হাজার ৯১৯ জন শিক্ষার্থী ভোটা দিবেন।

এই নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে ১৭৭ জন এবং ২১টি হল সংসদে ৪৪৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জাকসুকে ঘিরে ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা পুনরুজ্জীবনের প্রত্যাশা জাগিয়েছে। তবে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু শঙ্কা এবং প্রার্থিতা বাতিলের ঘটনা নিয়ে উত্তেজনা ক্যাম্পাসে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

*প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা*

নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরাপদ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। ভোট হবে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন) ব্যালট পেপারে, যা মেশিন-রিডেবল এবং দ্রুত গণনা করা যায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান জানান, “একজন ভোটারকে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে ৪০ জন প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে। এ জন্য ওএমআর ব্যালট ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ফলাফল স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করবে।”

২১টি ভোটকেন্দ্রে ২২৪টি বুথে ২১ জন রিটার্নিং অফিসার, ৬৭ জন পোলিং অফিসার এবং ৬৭ জন সহকারী পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতি ২০০ ব্যালটের জন্য একটি বাক্স থাকবে, এবং কেন্দ্রীয় ও হল সংসদের ব্যালট বাক্স আলাদাভাবে চিহ্নিত থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম জানিয়েছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থী সংখ্যার অনুপাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মোট ৬৭ জন শিক্ষক পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের সহায়তায় সমান সংখ্যক কর্মকর্তা—অর্থাৎ আরও ৬৭ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে।

প্রতিটি হলের ওয়ার্ডেন সংশ্লিষ্ট হলের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন এবং তাদের তত্ত্বাবধানে ভোটকেন্দ্র পরিচালিত হবে। পাশাপাশি হলপ্রাধ্যক্ষরা সার্বিক তদারকি করবেন।

নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রায় এক হাজার দুই শত পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন, যাদের একটি অংশ সিভিল পোশাকে ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করবেন। ভোটকেন্দ্রে আনসার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচন কমিশনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ক্যাম্পাসজুড়ে ৮০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তদারকির জন্য জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সমন্বয়ে মনিটরিং টিম, প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, “যদি কোনো ভোটার ভুলভাবে ব্যালট পূরণ করেন, তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জানালে তাকে নতুন ব্যালট দেওয়া হবে। এ কারণে অতিরিক্ত ব্যালটপত্র মুদ্রণ করা হয়েছে।”

যেসব শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে, তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে দুপুর ১২টার মধ্যে আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।