ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র বসানোর বরাদ্দ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, কোষাধ্যক্ষকে ডিঙ্গিয়ে ডাকসু নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এই বরাদ্দ আদায় করেছেন। কেউ কেউ একে ‘বিলাসিতা’ হিসেবেও দেখছেন।
এসি বরাদ্দের দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউই নিতে চান না। প্রধান প্রকৌশলী বলছেন, উপ-উপাচার্য অনুমোদন দিয়েছেন; উপ-উপাচার্য বলছেন, তিনি রুটিন দায়িত্বে ছিলেন এবং ফাইলটি উপাচার্যের কাছে পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে কোষাধ্যক্ষ জানাচ্ছেন, তিনি ছুটিতে ছিলেন, এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. আকরাম হোসেন জানান, “গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রশাসন এসি কেনার নির্দেশ দেয়। টাকার বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমদ।” তিনি আরও জানান, ৯টি এসি বসাতে ৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এই বরাদ্দ নিয়ে সমালোচনা করে বুধবার ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন সবশেষ ডাকসু নির্বাচনের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের। তিনি লেখেন, “বাস্তবতার আলোকে ডাকসু নেতাদের থেকে এমন বিলাসিতা অপ্রত্যাশিত। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে কোষাধ্যক্ষকে ডিঙ্গিয়ে প্রেশার তৈরি করা আরও উদ্বেগজনক।”
তিনি আরও বলেন, “যেটা উনিশের ডাকসুতে ছাত্রলীগ চাইলেও প্রশাসন অনুমোদন দেয়নি, সেটা পঁচিশে এসে নিরপেক্ষ প্রশাসন ফোন কল পেয়েই অনুমোদন দিলেন! ভিসি আসলেই নিরপেক্ষ, নিয়মবহির্ভূত কিছু করেন না। তবে এই এসি কেনায় কোনো অনিয়ম বা বেআইনি অনুমোদন হয়েছে কি না, তা তদন্তের জন্য তিনি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করবেন বলে আশা করি।”
বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমদ বলেন, “আমি কোনো টাকা অনুমোদন দিইনি। কোষাধ্যক্ষ দেশের বাইরে থাকায় আমি রুটিন দায়িত্বে ছিলাম। ফাইলটি আমার কাছে আসার পর আমি উপাচার্যের কাছে পাঠিয়েছি।”
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আমি এসব বিষয়ে অবগত নই। আমি যখন ছুটিতে ছিলাম, তখন কাজটি হয়েছে। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।”
ডাকসু নির্বাচনে বাম ধারার সাত সংগঠন থেকে এজিএস প্রার্থী হওয়া জাবির আহমদ জুবেল লিখেছেন, “চলতি বছরের ডাকসুর বাজেট ৩০ লাখ টাকা। শিক্ষার্থীদের জন্য ঠিক কত টাকার কাজ হয়েছে, তার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। অথচ ডাকসু নেতাদের কক্ষে নিয়মবহির্ভূতভাবে এসি স্থাপনে ৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা ব্যয়সহ ভবনের সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনে ২৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রতিটি কাজ উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান ছাড়াই ডিপিএম পদ্ধতিতে করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ডাকসু নেতারা ব্যক্তিগত কক্ষ নিজেদের অর্থে বা সংগঠনের অর্থে সাজাতে পারেন, কিন্তু প্রশাসনিক কাজ নিয়মের মধ্যে থেকেই করতে হবে। স্পনসরের নামে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিজ্ঞাপনের জায়গায় পরিণত করা যাবে না।”
দরপত্র আহ্বান না করার বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত কাজটি করতে বলেছিল; আমরা সেই নির্দেশেই কাজ করেছি।”
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফোনেও তিনি সাড়া দেননি।
অভিযোগের বিষয়ে ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদ বলেন, “এসি বসানোর বিষয়ে ডাকসু নেতাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যা কিছু করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই করেছে।”
গত ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ভিপি, জিএস ও এজিএসসহ ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা ৯টি পদে জয় পান। বাকি তিনটি পদে জয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।