জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে যে সংকটের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তাকে ‘বিভ্রান্তি’ আখ্যা দিয়ে ‘আনন্দঘন পরিবেশে’ দলিল স্বাক্ষরের আশার কথা জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, “আজ কিছু বিভ্রান্তি বিভিন্ন দিক থেকে প্রচারিত হয়েছে। আমাকে অনেক রাজনৈতিক নেতারা এবং সাংবাদিকরা ফোন দিয়েছেন। আমি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের দিক থেকে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হচ্ছে। পাশাপাশি আপনারা যে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন, তাতে আমরা আশাবাদী যে একটি আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমরা এ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ করতে পারব।”
বুধবার সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে ‘জরুরি’ বৈঠকে স্বাগত বক্তব্যে এই কথা বলেন রীয়াজ। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শুরু হওয়া এই বৈঠকে অংশ নেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
আলী রীয়াজ বলেন, “একদিন পর শুক্রবার জাতীয় সংসদের প্লাজায় দাঁড়িয়ে আমরা আশা করছি… জাতীয় সনদ যে প্রক্রিয়ার মধ্যে আপনারা অংশগ্রহণ করেছেন এবং বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে যে অবস্থানে পৌঁছেছেন, তারই অংশ হিসেবে জাতীয় সনদে আমরা স্বাক্ষর করতে পারব। এটাই আমরা আশা করছি। তারই প্রস্তুতির দিকগুলো সম্পূর্ণরূপে শেষ করার চেষ্টা করছি। অনুষ্ঠানের জন্য আরও সময় নেওয়ার থেকে দ্রুততার দিকে আমরা মনোযোগ দিয়েছি। এছাড়া আমাদের দিক থেকে পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে আপনাদের প্রত্যেককে জানানো হয়েছিল এবং প্রত্যেকটি দল থেকে জাতীয় সনদে স্বাক্ষরকারীদের নামও বেশ কিছুদিন আগে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আমরা চাই, এই অনুষ্ঠানে জাতীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অন্যান্য অতিথিরাও উপস্থিত থাকুন।” সেই উদ্দেশ্যেই দলগুলোর কাছে অতিথিদের তালিকা চাওয়ার কথাও তুলে ধরেন কমিশনের সহ-সভাপতি। তিনি জানান, আমন্ত্রণপত্র বৃহস্পতিবার থেকে পাঠানো হবে এবং স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বল্প সময়ে সকল দলের প্রতিনিধি স্বাক্ষর করতে পারবেন, সেই ব্যবস্থা রাখা হবে।
বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদ মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, ১২ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুসহ ৩১টি দল ও জোটের নেতারা।
এর আগে দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের সদস্যদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় ডাকা জরুরি বৈঠক মূলত শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি সংক্রান্ত। কমিশনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার ৩২টি রাজনৈতিক দল ও একটি জোটের কাছে চূড়ান্ত জুলাই জাতীয় সনদ পাঠানো হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ১৭টি বিষয়ে ৮৪ দফার জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করেছে। বাকি ৬৭টি বিষয়ে কিছু রাজনৈতিক দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। জুলাই সনদে ৮৪ দফার মধ্যে ৪৭টি ‘সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার’ এবং বাকি ৩৭টি ‘আইন/অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার উল্লেখের পর স্বাক্ষরের জন্য স্থান রাখা হয়েছে।