সংস্কার বাস্তবায়নে ঐকমত্য গড়তে আজ স্বাক্ষর হচ্ছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’

রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থেকেই আজ শুক্রবার স্বাক্ষর হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগসহ নানা সংস্কার বিষয়ে ৮৪টি প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হয়েছে এই সনদ, যেখানে সই করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা এবং ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি।

তবে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সব দলের উপস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঘোষণা দিয়েছে, তারা আজকের অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না। গতকাল গভীর রাতে ফেসবুকে দলটির মিডিয়া গ্রুপে দেওয়া এক বার্তায় বলা হয়, আইনি ভিত্তি ও আদেশের নিশ্চয়তা ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করলে তা মূল্যহীন হবে। একইভাবে বাম ধারার চারটি দলও জানিয়েছে, তারা সনদে সই করবে না। তবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সই করার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানান, তাঁরা আশাবাদী, শেষ মুহূর্তে সব দলই সনদে সই করবে। তিনি বলেন, আজকের পরও সনদে সই করার সুযোগ থাকবে, এবং ৩১ অক্টোবরের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সনদ বাস্তবায়নের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ পেশ করা হবে।

আজ বিকেল চারটায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। জাতীয় সংগীত ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি ও কমিশনের সদস্যরা সনদে সই করবেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিদেশি কূটনীতিক, আমলা, সাংবাদিক ও বিশিষ্ট নাগরিকসহ প্রায় তিন হাজার আমন্ত্রিত অতিথি।

জুলাই সনদে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসনে সংস্কার নিয়ে ৮৪টি প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে, বাকিগুলো আইন, বিধি বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কার্যকর করা যাবে। গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমানো, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কিছুটা বাড়ানো, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের পদ পৃথক রাখা, সংসদে কিছু কমিটির নেতৃত্ব বিরোধী দলকে দেওয়া এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা চালু করা।

তবে এসব সংস্কার বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি গণভোটের দাবি তুলেছে, আর বিএনপি চায় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হোক। এসব ভিন্নমত সনদে উল্লেখ থাকলেও বিএনপি বলছে, তাদের প্রস্তাব অঙ্গীকারনামায় প্রতিফলিত হয়নি।

রাষ্ট্রীয় সংস্কারপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জুলাই সনদ প্রস্তুতি শুরু হয় গত বছরের অক্টোবরে। ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘ আলোচনার পর সনদটি চূড়ান্ত করে। আজকের সইয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এর বাস্তবায়নের নতুন অধ্যায়।