খানপুরে ধর্ষণ অভিযোগে যুবককে তুলে নিয়ে মারধর, হাসপাতালে মৃত্যু

নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকায় ধর্ষণের অভিযোগ তুলে এক নিরাপত্তাকর্মীকে বাসা থেকে টেনে বের করে মারধরের আট ঘণ্টা পর তার মৃত্যু হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাত ৮টার দিকে মারা যান ৩০ বছর বয়সী আবু হানিফ। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শাহাদাত হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার আবুল কালামের ছেলে হানিফ পেশায় একজন নিরাপত্তা প্রহরী ছিলেন।

চিকিৎসকের ভাষ্যমতে, সোমবার বিকেল ৩টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন লোক গুরুতর আহত অবস্থায় হানিফকে হাসপাতালে নিয়ে আসে এবং তাকে ভর্তি করিয়ে চলে যায়। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে পৌঁছান।
ডা. শাহাদাত বলেন, “তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ও মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল।”

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ নাছির আহমদ জানান, দুপুরে এলাকার কয়েকজন যুবক হানিফের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং খানপুর জোড়া ট্যাংকি এলাকায় বেধড়ক মারধর করে।

নিহতের মেজো বোন রাবেয়া জানান, দুপুর ১২টার দিকে কয়েকজন ছেলে হঠাৎ তাদের বাসায় ঢুকে তার ভাইকে মারতে শুরু করে এবং টেনে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, “আমরা বারবার জিজ্ঞেস করেছি কেন মারছে, কিন্তু তারা কিছুই বলেনি। পরে শুনি, ভাই নাকি কোনো বাচ্চাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। কিন্তু কে, কখন—এই বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।”

ভগ্নিপতি মো. ইব্রাহিম বলেন, “আমি তখন ডিউটিতে ছিলাম। ফোনে খবর পেয়ে বাড়ি এসে দেখি বাসায় কেউ নেই। পরে আবার ফোনে জানানো হয়, খানপুর এলাকায় তাকে নিয়ে গেছে। আমি গিয়ে দেখি, আমার শ্যালককে ওয়াসা অফিসের ভেতরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। উপস্থিত যুবকদের মধ্যে পাশের বাড়ির অভি নামে একজনকে চিনতে পারি। কিছুক্ষণ পর তারা হানিফকে অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়। পরে আমরা তাকে হাসপাতালে পাই।”

স্বজনদের মতে, হানিফ খানপুরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। কয়েক দিন আগে তার স্ত্রী তিন সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান।

হাসপাতালের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার বাবা আবুল কালাম বলেন, “আমার ছেলে যদি কোনো অপরাধ করে থাকে, আইন অনুযায়ী শাস্তি হোক। কিন্তু তাকে এভাবে মেরে ফেলার কোনো অধিকার কারও নেই। আমি এই হত্যার বিচার চাই।”

ওসি নাছির আহমদ জানান, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
তিনি বলেন, “ধর্ষণচেষ্টার বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ আগে আসেনি। মরদেহ হাসপাতালে পাওয়া গেছে। আদৌ কোনো ধর্ষণচেষ্টা হয়েছিল কিনা, সেটিও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”