চিফ প্রসিকিউটরের অভিযোগ: শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সংস্থায় উসকানিমূলক কার্যকলাপ চালান

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে গন্ডগোল সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন এবং সেনাবাহিনীকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার এই মন্তব্যগুলো ট্রাইব্যুনালে করেন তিনি। আজকের দিনে শেখ হাসিনা ও অন্য দুই আসামির বিরুদ্ধে মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনা সম্পন্ন হয়েছে।

তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের মধ্যে একটি সিভিল ওয়ার — অর্থাৎ গৃহযুদ্ধ — উস্কে দিতে চেয়েছেন। তিনি সেনাবাহিনীর প্রতি বার্তা দিতেও উদ্ধুদ্ধ করেছেন যে, ‘‘তোমাদের অফিসারদের বিচার হয়, তোমরা কেন রুখে দাঁড়াচ্ছ না?’’ প্রসিকিউটরের বক্তব্য অনুযায়ী, এমন উসকানিতে কোনোভাবে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী বা সাধারণ জনগণ পা দেননি।

এ মামলার অন্য দুই আসামি ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়েছেন।

চিফ প্রসিকিউটর আরও দেন, এই বিষয়ে যাঁরা অভিযুক্ত হয়েছেন — বিশেষ করে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান — তাঁদের মধ্যে কোনো অনুশোচনার ছাপ দেখা যায় না। অতীব গুরুতর এই অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে, এটি বিশ্বজুড়ে পরিচিত, এবং সেই অপরাধের বিষয়ে অভিযুক্তরাও জানেন; তবুও তারা অনুশোচনা দেখাননি। উল্টোভাবে, যাঁরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের হত্যা করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে তাজুল ইসলামের অভিযোগ। তিনি বলেছেন, তাঁদের বাড়িঘর ধ্বংস করে দেওয়ার কথা বলেছেন এবং লাশগুলো বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়ার কথাও বলে থাকেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞে পুরো প্রজন্মকে নষ্ট করার চেষ্টা, প্রায় ৩৫ হাজার মানুষকে আহত, অঙ্গহানি করা—এসব ঘটানোর পরও অভিযুক্তদের মধ্য থেকে সামান্যতম রিমোর্স বা অনুশোচনার কোনো চিহ্ন নেই। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, হত্যাকাণ্ডের সময় সেখানে শিশু, নারী, মজুর ও ছাত্র-ও ছিলেন; তাদের হত্যা করতে অভিযুক্তের বুক কাঁপেনি। ফলত চিফ প্রসিকিউটর মনে করেন, সর্বোচ্চ শাস্তিই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অবশ্য প্রাপ্য।

আদালতে তাজুল ইসলাম আরো বলেন, যারা অপরাধ সংঘটিত করেছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনগণ ও সেনাবাহিনী কোনো প্রলোভনে বা উসকানিতে পড়েনি; বরং তারা বিচারের প্রক্রিয়াকে অক্ষুন্ন রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচার চলমান রয়েছে এবং তা সুগমভাবে পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং কোনো ধরনের উসকানিতে কেউ ভোগাড় হচ্ছে না।