দুইশ’ কোটি টাকা পাচারের মামলায় রোববারের মধ্যে আদালতে হাজিরার নির্দেশ সম্রাটকে

প্রায় দুইশ কোটি টাকা পাচারের মামলায় জামিনে থাকা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে আগামী রোববারের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান। বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন বিচারক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন।

এদিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ নির্ধারিত ছিল। সম্রাটের আইনজীবী আফরোজা শাহনাজ পারভীন (হীরা) দণ্ডবিধির ২০৫ ধারায় তার পক্ষে হাজিরা দেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাজিরাটি বাতিলের আবেদন জানান।

বিচারক আসামিপক্ষের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, সম্রাট বর্তমানে কোথায় অবস্থান করছেন। উত্তরে আইনজীবী জানান, তার জানা নেই সম্রাট কোথায় আছেন। এরপর আদালত নির্দেশ দেন, রোববারের মধ্যে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

আইনজীবী আফরোজা শাহনাজ বলেন, অভিযোগ গঠনের আগে পর্যন্ত সম্রাটের পক্ষে আইনজীবী হাজিরা দিতে পারবেন—এমন আদেশ ছিল আদালতের। সেই আদেশ বাতিলের সুযোগ নেই। বর্তমান অবস্থায় নতুন নির্দেশ কেন দেওয়া হলো, তা বোধগম্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রমনা থানায় সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) রাশেদুর রহমান মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল, পল্টন ও কাকরাইল এলাকায় অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে সম্রাট বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন এবং এনামুল হক আরমানের সহায়তায় প্রায় ১৯৫ কোটি টাকা সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করেন।

বিদেশ ভ্রমণের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সম্রাট সিঙ্গাপুরে ৩৫ বার, মালয়েশিয়ায় তিনবার, দুবাইয়ে দুইবার এবং হংকংয়ে একবার ভ্রমণ করেছেন। একই সময়ে তার সহযোগী আরমান ২৩ বার সিঙ্গাপুর যান।

২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় র‌্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার ঘটনা প্রকাশ্যে এলে সম্রাট আত্মগোপনে চলে যান। পরে ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকা থেকে সম্রাট ও আরমানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সেদিন বিকেলে কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে সম্রাটের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং নির্যাতনের কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম জব্দ করার কথা জানায়।

ক্যাঙ্গারুর চামড়া রাখার দায়ে সম্রাটকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়।

ওই বছরের ৬ নভেম্বর রমনা থানার অস্ত্র মামলায় পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ১২ নভেম্বর দুদক তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে। এরপর ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর অর্থ পাচারের মামলা হয়। র‌্যাব ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর মাদক মামলায় সম্রাট ও আরমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের ছয় মাসের সাজা শেষ হওয়ার পর ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল অস্ত্র ও অর্থ পাচারের মামলায় জামিন পান সম্রাট। পরদিন ১১ এপ্রিল মাদক মামলায়ও তিনি জামিন পান। অবশেষে অবৈধ সম্পদ মামলায় জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর ১১ মে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।