সেনাবাহিনীকে বিতর্কে না টানার আহ্বান জামায়াত আমিরের

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা হলে তার পরিণতি দেশের জন্য সুখকর হবে না।

শনিবার মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে দলের মজলিশে শূরার উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনী আমাদের গর্বিত প্রতিষ্ঠান। ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাদের অনেক মর্যাদাপূর্ণ অবদান রয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠান যেন কোনোভাবেই বিতর্কিত না হয়, আমরা সেটা চাই না।”

তিনি আরও বলেন, “সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা হলে একটি স্বাধীন দেশ বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আমরা চাই, সেনাবাহিনী মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত থাকুক।”

শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা সেনাবাহিনীকে সেই গৌরবের জায়গায় রাখতে চাই। এ বিষয়ে কারও মন্তব্য থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ এটি দেশের সার্বিক নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত।”

সংলাপের আহ্বান

দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অর্থবহ সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াত আমির।

তিনি বলেন, “সংঘাত আর কাঁদা ছোড়াছুড়ির মাধ্যমে জাতিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া কোনোভাবেই সমীচীন নয়। এর অবসান দরকার। এজন্য প্রয়োজন অর্থবহ ডায়ালগ এবং এর উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকেই।”

তিনি জানান, জামায়াতে ইসলামী নিজ অবস্থান থেকে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নির্বাহী পরিষদের বৈঠক থেকে সর্বদলীয় সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে।

নির্বাচনের জন্য দুই রোডম্যাপের দাবি

শফিকুর রহমান বলেন, “সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আমরা শুরু থেকেই দুটি রোডম্যাপ দাবি করে আসছি—একটি সংস্কার সংক্রান্ত, অন্যটি নির্বাচন সংক্রান্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো রোডম্যাপ জনসমক্ষে আসেনি। এতে জনমনে সন্দেহ ও সংশয় তৈরি হয়েছে।”

তিনি সরকারকে আহ্বান জানান, দুটি রোডম্যাপ শিগগিরই প্রকাশ করা হোক যাতে জনগণের আস্থা ফিরে আসে।

“আমরা তাকে বাধ্য করতে চাই না”

জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে শফিকুর রহমান বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে আগামী জুন মাসের মধ্যে হবে। আমরা তার কথায় আস্থা রাখতে চাই এবং ফ্লেক্সিবলি নিজের অবস্থান দিয়েছি। তাকে আমরা বাধ্য করতে চাই না, কারণ তিনি সব দলের সমর্থনপুষ্ট।”

ফ্যাসিস্টদের বিচারের দাবি

তিনি বলেন, “যারা ১৫ বছর গুম-খুন ও সম্পদ লুণ্ঠনে জড়িত ছিল, তাদের বিচারের প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হওয়া দরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের মধ্যে পুরো বিচার না হলেও কিছু বিশ্বাসযোগ্য অগ্রগতি দেখতে চায় জনগণ।”

মানবিক করিডোর ও বন্দর ইস্যুতে সতর্কতা

সম্প্রতি মানবিক করিডোর বিষয়ে তিনি বলেন, “এটি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সংসদ না থাকায় এমন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকারকে দেশের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত।”

বন্দর ব্যবস্থাপনা নিয়েও সতর্ক করে শফিকুর রহমান বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর দেশের লাইফলাইন। এ বিষয়ে হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে অগ্রসর হওয়া উচিত।”